চাঁচল: মালদা জেলার একটি বর্ধিষ্ণু এবং ঐতিহ্যমন্ডিত গ্রাম হল চাঁচল-১ নম্বর ব্লকের কলিগ্রাম। এই গ্রামের ইতিহাস প্রায় হাজার বছরের পুরোনো। ডাচেদের উপনিবেশ ছিল এই গ্রামে। মালদা জেলার প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র ন্যায় রত্ন চতুস্পাঠি নামে সাংস্কৃতিক টোল ছিল এই গ্রামেই। একসময় সমগ্র জেলার শিক্ষা এবং সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্র ছিল এই কলিগ্রাম। আর ঐতিহ্যবাহী এই গ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কলিগ্রামের পাণ্ডে বাড়ি। রথ যাত্রার দিনে সাজো সাজো রব কলিগ্রামের পান্ডে বাড়িতে। আনুমানিক ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পান্ডে বাড়ির জগন্নাথ মন্দিরে রীতি মেনে পূজিত হয়ে আসছে জগন্নাথ বলরাম এবং সুভদ্রা।
শুধু রথ যাত্রার দিনে নয় বছরের প্রত্যেকটা দিনই জগন্নাথ মন্দিরে দুই বেলা পুজো হয়। সেই পুজো করেন এই মন্দিরের নিত্য পুরোহিত। আজ রথ যাত্রার দিনে চারবার পুজো হয়। দুপুরবেলা অন্ন ভোগ দেওয়া হয়। গ্রামের সকল মানুষ আজকের দিনে পুজো দিতে আসে পান্ডে বাড়ির জগন্নাথ মন্দিরে। লোকমুখে শোনা যায় পান্ডে পরিবারেরই এক সদস্য মহানন্দা নদীতে জগন্নাথ বলরাম এবং সুভদ্রার বিগ্রহ ভেসে যেতে দেখেছিলেন। সেই বিগ্রহ নিয়েই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মন্দিরে। শুরু হয় পুজো।
বিগ্রহগুলিও আনুমানিক ৪০০ বছর প্রাচীন এবং মালদা জেলার জগন্নাথ, বলরাম এবং শুভদ্রার সবথেকে বড় বিগ্রহ। বর্তমান যে মন্দিরটি রয়েছে সেটি তৈরি হয় বাংলার ১৩৭৬ সালে। সাথে জগন্নাথ মন্দিরের পাশে তৈরি করা হয় একটি শিব মন্দির। বর্তমানে ওই পরিবারের সদস্য মানব পান্ডে এবং তাঁর মা দুলুরাণী পান্ডে মন্দির এবং পুজোর সমস্ত দেখভাল করেন। রথযাত্রা ছাড়াও দোলযাত্রা, ষষ্ঠী এবং মঙ্গলচন্ডী সহ বছরের বিশেষ দিনে এই মন্দিরে পুজোর আয়োজন হয়। মানব পান্ডে জানান, এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। সরকার এই মন্দিরকে হেরিটেজ ঘোষণা করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে ভাল হয়। স্থানীয় বাসিন্দা হেনা রানী দাস জানান, এই মন্দিরের সঙ্গে গ্রামবাসীদের বহু স্মৃতি ও ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে।