আলিপুরদুয়ার ব্যুরো: কালীপুরের গণেশ বর্মন গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে কেরল থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন। এক সপ্তাহ পর কাজে ফিরে যান। আর দু’দিন পরেই আলিপুরদুয়ারে লোকসভা ভোট। কিন্তু এবার আর বাড়ি ফেরেননি গণেশ। ফোনে জানালেন, ভোট দিতে বাড়ি আসতে হলে যাতায়াত ভাড়া সহ অন্যান্য বাবদ খরচ প্রায় ৬-৭ হাজার টাকা। তার ওপর এক সপ্তাহ কাজ বন্ধ থাকলে আরও ৫-৬ হাজার টাকার ধাক্কা। তাই এবার আর বাড়ি ফিরছেন না। বন্ধ রায়মাটাং, কালচিনি বাগানের শ্রমিক পরিবারের দাবি, কয়েকমাস আগেই তো পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে। তখন বাড়ি এসেছিলেন। এত ঘনঘন ভোট হলে কাজ ফেলে আসাটা সমস্যার। ফালাকাটা, আলিপুরদুয়ার-১ ব্লক, মাদারিহাট-বীরপাড়া, কালচিনি ইত্যাদি ব্লকে পরিযায়ী শ্রমিকদের(Migrant workers) গ্রামের ছবিটা এরকমই।
এটা পঞ্চায়েত ভোট হলে এতদিন বারবার বেজে উঠত পরিযায়ী শ্রমিকদের ফোন। ভোট নিতে সেধে সেধে ওদের বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন ভিনরাজ্য থেকে। এমনকি যাতায়াত ভাড়া বাবদ টাকা দিয়ে দেওয়ারও ‘অফার’ ছিল! কিন্তু লোকসভা ভোটের(Lok Sabha Election 2024) আগে পরিযায়ী শ্রমিকরা ‘দুয়োরানি’। এই ভোটে পরিযায়ী শ্রমিকদের যে কদর থাকে না, তা মানছেন তৃণমূল কর্মী আবদুল্লাহ হক। খয়েরবাড়ির আবদুল্লাহ পঞ্চায়েত ভোটের সময় ভোট ম্যানেজমেন্টের কাজ করেন। কোথাকার কে কোন রাজ্যে কাজের খোঁজে গিয়েছেন, তাঁর নাড়িনক্ষত্র সবই জানতে হয়। বললেন, ‘পঞ্চায়েত ভোটে পাড়ায় পাড়ায় প্রার্থী থাকে। তখন দু’-একটি ভোটও প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করে। তাই প্রতিটি ভোটের মূল্য থাকে অনেক বেশি। তবে লোকসভা ভোট হয় অন্য ছকে।’
এদিকে, পরিযায়ীদের নিথর দেহ যে কোনও সময় বাড়িতে চলে আসছে। গত এক বছরে এই জেলার বিভিন্ন প্রান্তের দশজন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছেছে। গত ১৬ মার্চ আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের পশ্চিম কাঁঠালবাড়ি গ্রামের বছর তিরিশের লক্ষ্মণ সরকারের নিথর দেহ কেরল থেকে বাড়িতে পৌঁছায়। সন্তান হারানোর শোক এখনও ভোলেননি তাঁর মা-বাবা। লক্ষ্মণের বাবা পেশায় টোটোচালক রাশু সরকারের কথায়, ‘গ্রামে কাজ করলে ছেলেকে হারাতাম না। গ্রামে কাজ নেই, ছেলেকে হারালাম। তাই ভোট নিয়ে ভেবে আমার কী লাভ।’ অযথা খরচ করে শিশাগোড় গ্রামের সম্রাট রায়, ধীরেন বর্মনরাও এবার ভোটে বাড়ি ফিরতে নারাজ।
যদিও পরিযায়ীদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে রাজনৈতিক দলগুলির দাবি। বিজেপির কালচিনি বিধানসভার আহ্বায়ক অলোক মিত্র জানান, ইতিমধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে তাঁদের ভোট দিতে বাড়ি ফেরার আবেদন জানানো হয়েছে। বিজেপির মাদারিহাটের ৩ নম্বর মণ্ডলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শৈলেন রায় বলছেন, ‘মূলত তাঁদের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হচ্ছে, যাঁরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেশি দূরে নেই।’ তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক সুভাষচন্দ্র রায় জানালেন, তাঁদের দলের তরফেও বুথে বুথে কর্মীরা যাচ্ছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্পর্কেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
রায়মাটাং চা বাগানের শংকর তিরকি আবার ভোটার লিস্ট থেকে ছেলে-পুত্রবধূর নাম কেটে যাওয়ার ভয়ে তাঁদের হরিয়ানা থেকে আসার কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁরা আদৌ ভোট দিতে আসবে কি না, সেটা নিশ্চিত নয়।