পারমিতা রায়, শালবাড়ি: মেনুতে রয়েছে লাপিং ঝোল, রামেন, চিকেন কিমা নুডল সহ আরও নানা পদ। এ ক্যাফে আর পাঁচটা ক্যাফের থেকে আলাদা। এখানে খাবারের অর্ডার যাঁরা নিতে আসেন, তাঁদের মুখে কথা নেই। টেবিলের চিরকুটে অর্ডার লিখে দিতে হয়। তা দেখে দ্রুততার সঙ্গে সেই অর্ডার টেবিলে হাসিমুখে সার্ভ করেন রূপা ছেত্রী, সিদ্ধার্থ তামাং, প্রসন্ন মাঝি ও প্রেমকিট লেপচারা। চারজনই কথা বলতে পারেন না। তাঁরা মূক ও বধির। শালবাড়ির ওই ছোট ক্যাফের আনাচে-কানাচে যেন ধ্বনিত হচ্ছে ইচ্ছাশক্তির জয়গান।
টয়ট্রেন লাইন পেরিয়ে ক্যাফেতে ঢুকতেই নজর টানে একটি দেওয়াল। সেখানে সাঁটা গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া, তাঁদের নানা মন্তব্য। খাবারের স্বাদের থেকেও ওই প্রতিক্রিয়াগুলিই যেন চারজনের জীবনের মূল লড়াইয়ের রসদ। হঠাৎ কীভাবে এল ক্যাফে তৈরির প্ল্যান? টেবিলের চিরকুটে প্রশ্নটা লিখতেই হাসি খেলল রূপাদের চোখেমুখে। চিরকুটেই রূপার লিখিত উত্তর, তাঁর সঙ্গে প্রসন্ন, প্রেমকিটের পরিচয় সেই শৈশবে। তাঁরা একত্রে কালিম্পংয়ের সেন্ট মেরি স্কুলে পড়তেন। পড়াশোনা শেষেও সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুত্বে ছেদ পড়েনি। প্রসঙ্গত, রূপা ও প্রেমকিটের বাড়ি কালিম্পংয়েই। প্রসন্ন থাকেন জয়গাঁয়।
পরে রূপার বিয়ে হয় কাঠমান্ডুর সিদ্ধার্থ তামাংয়ের সঙ্গে। রূপার চিরকুট জানাচ্ছে, কথা বলতে না পারায় চাকরি মেলার সম্ভাবনা ছিল না। তাই, অন্য কিছু করে নিজেদের ভবিষ্যতের ভাবনা শুরু। গত বছরের শেষ দিকে রূপা-সিদ্ধার্থরা শালবাড়ি আসেন। নানা ক্যাফেতে ঘুরতে ঘুরতে তাঁদের মনে তৈরি হয় ক্যাফে তৈরির পরিকল্পনা। এরপরই চার বন্ধুর সিদ্ধান্ত, শালবাড়িতে ঘরভাড়া নিয়ে থাকার পাশাপাশি ক্যাফে খুলবেন। সেইমতো চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাঁদের স্বপ্নের ক্যাফের দরজা খুলে দেন। ক্যাফে চালাতে কোনও সমস্যা? প্রসন্ন ইশারায় বোঝালেন, কোনও সমস্যা নেই। স্থানীয় লোকজন খুবই ভালো, সজ্জন। চিরকুটে লিখেই অর্ডার দেন। আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে সেই অর্ডার বানিয়ে সার্ভ করি। তবে এখানেই থামতে নারাজ প্রসন্নরা। প্রেম চিরকুটে লিখেই জানালেন তাঁদের পরবর্তী পরিকল্পনা। বোঝালেন, তাঁদের স্বপ্ন এই ক্যাফে আরও বড় করা। ভবিষ্যতে তাঁদের লক্ষ্য, এখানে মূক ও বধিরদের কর্মসংস্থান। এসব দেখে কিছুটা আবেগতাড়িত অনিশ তামাং, প্রিয়া লেপচারা। ক্যাফেতে এসে প্রসন্নদের তৈরি স্ট্রবেরি শেকের স্বাদ নিতে নিতেই বললেন, ‘ওঁদের স্বপ্নের সাফল্য কামনা করি।’