প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ ভুবনেশ্বর এইমসের মর্গে এখনও অশনাক্ত পড়ে রয়েছে বালেশ্বর কাণ্ডে মৃত ৮১ টি রেল যাত্রীর মরদেহ। এর মধ্যে বেশ কিছু মৃতদেহ ‘ডি এন এ স্যাম্পলিং’-এর জন্য গেছে, যার রিপোর্ট এখনও হাতে পায়নি রেল। ‘ডিএনএ স্যাম্পলিং’র মাধ্যমে কিছু দেহকে শনাক্ত করা গেলেও, বহু দেহ পড়ে আছে আজও অশনাক্ত। এই দেহগুলি নিয়ে কী করা উচিত, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে রেল। এদিন অশ্বিনী বৈষ্ণবের রেল মন্ত্রক সূত্রে পাওয়া গেছে এমনই তথ্য।
গত ২ জুন বালেশ্বরের কাছে বাহানাগা বাজার স্টেশনে দূর্ঘটনার কবলে পড়ে আপ শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ভয়াবহ সেই দূর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২৮৮ জন। আহতের সংখ্যা প্রায় ১৫০০। এর পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৪ জন রেল যাত্রীর মৃত্যু হলে, দূর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯২ জন। এর পরেই প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় বিপুল সংখ্যক দেহ শনাক্তকরণ না হওয়ায়। এর জেরে প্রবল সমস্যায় পড়ে রেল মন্ত্রক। ওডিশা সরকার থেকে জানানো হয় মৃত ২৯২ জনের মধ্যে ১৬০ টি দেহ শনাক্ত করা যায়নি। দীর্ঘদিন ‘নর্থ ওডিশা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র অস্থায়ী মর্গে রাখা ছিল শ’য়ে শ’য়ে দেহ। পরে দেহগুলি ভুবনেশ্বর এইমসের মর্গে স্থানান্তরিত করা হয়।
এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে রেলমন্ত্রকের তরফে জারি করা হয় গণ আপিল। ওডিশা সরকারের সহায়তায় দূর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তিদের ছবি আপলোড করা হয় রেলের ওয়েবসাইটে৷ আপলোড করা হয় অশনাক্ত থাকা চিকিৎসাধীন আহত যাত্রীদের ছবিও। যে কেউ সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে লিংকে ক্লিক করে অশনাক্ত যাত্রীদের শনাক্ত করতে পারেন। পাশাপাশি রেল এর হেল্পলাইন (১৩৯) এবং বিএমসি বা ভুবনেশ্বর মিউনিসিপ্যাল কমিশনের হেল্পলাইন নং (১৮০০ ৩৪৫ ০০৬১/ ১৯২৯) খুলে দেওয়া হয় নিরবিচ্ছিন্ন ২৪ ঘন্টার জন্য৷ দূর্ঘটনাগ্রস্ত যাত্রীদের পরিবার যে কোনও সময়ে সেই হেল্পলাইনের মাধ্যমেও ‘অশনাক্তকারী’দের শনাক্ত করতে সক্ষম।
রেলের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের দাবি, ওই পন্থায় কাজ দিয়েছে। ওয়েবসাইটের সূত্র ধরেই বহু মৃতজনের পরিবার ভুবনেশ্বর এইমসে এসে তাঁদের প্রিয়জনদের দেহ শনাক্ত করেন। এখনও পর্যন্ত ৭৯ জনের দেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করা রেল সূত্রে৷ বেশ কিছু মৃতদেহের শনাক্তকরণের স্বার্থে ডিএনএ স্যাম্পলিং’ও করা হয়েছে, যদিও তার রিপোর্ট আসা এখনও বাকি। তবে এখনও অশনাক্ত ৮১ জন, এদের পরিবার সূত্রে কেউ মৃতদেহ দাবি করতে আসেনি। এনিয়ে চিন্তায় পড়েছে রেল মন্ত্রক। আর কতদিন মর্গে দেহগুলি ফেলে রাখা সম্ভব সে নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। রেলের ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, এই সপ্তাহেই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে গণ সৎকার ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই বলে জানিয়েছে রেলের ওই শীর্ষ আধিকারিক।