শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে চার বছরের স্নাতক স্তরের প্রথম সিমেস্টারে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা কলেজগুলিতে রেকর্ড সংখ্যক ফেল (NBU Result)। বিএ মেজর-এ ছাত্রদের ফেলের হার ৯৪ শতাংশেরও বেশি। প্রায় ৯০ শতাংশ ছাত্রী সব বিষয়ে পাশ করতে পারেননি। বিএসসি, বিকম-এর ক্ষেত্রে পাশের হার ৩২ শতাংশেরও কম। বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশের পর হইচই পড়ে গিয়েছে কলেজগুলিতে। এদিন সিবিসিএস ব্যবস্থাপনায় হওয়া তিনটি সিমেস্টারের পরীক্ষার ফলাফলও প্রকাশিত হয়েছে। সেই ফলাফলেও গড় পাশের হার পঞ্চাশ শতাংশেরও কম।
কোচবিহার থেকে ইসলামপুর পর্যন্ত ৪৯টি কলেজ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের (North Bengal University) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কেন রেকর্ড সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ফেল করলেন, তার কারণ খুঁজতে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে সমস্ত বোর্ড অফ স্টাডিজের চেয়ারম্যান ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠকে বসবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী সপ্তাহে বৈঠক করা হবে কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক এবং ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক দেবাশিস দত্তের কথা, ‘ফলাফল নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। নতুন শিক্ষানীতি অনুসারে যারা প্রথম পরীক্ষা দিচ্ছে তারা কোভিডের সময়কার ছাত্রছাত্রী। তাছাড়া নতুন সিস্টেম সম্পর্কে এখনও সবাই ঠিকঠাক বুঝতে পারেনি। ফলে রেকর্ড সংখ্যক পরীক্ষার্থী পাশ করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদেরই অনেক বেশি করে দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা পর্যালোচনা করার পর পদক্ষেপ করব।’
নতুন শিক্ষানীতির প্রথম সিমেস্টারে বিএ মেজর-এ মোট ১৩ হাজার ৬৪২ জন ছাত্র এবং ২২ হাজার ৯৩২ জন ছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র ৮১২ জন ছাত্র (৫.৫৯ শতাংশ) এবং ২৩১৯ জন ছাত্রী (১০.১১ শতাংশ) পাশ করেছেন। বিএসসি মেজর-এ ২০৩২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছেন ৫৭০ জন। বিকম মেজর-এ পরীক্ষার্থী ছিলেন ২১২৮ জন। পাশ করেছেন ৪০৭ জন। এদিন সিবিসিএস-এর প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম সিমেস্টারের ফলাফলও প্রকাশিত হয়েছে। তাতে অনার্স কোর্সে পাশের হার কোনও সিমেস্টারে ৪০ শতাংশ, কোনও সিমেস্টারে ৫৫ শতাংশ হলেও প্রোগ্রাম কোর্সে পাশের হার কোথাও ১৬ শতাংশ কোথাও ১৮ শতাংশ।
ফলাফল দেখে হতাশ শিলিগুড়ি মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুব্রত দেবনাথ। তাঁর বক্তব্য, ‘এতদিন সবাই বই খুলে পরীক্ষা দিয়েছে। সেভাবে পড়াশোনা করেনি। ফলে প্রথমবার বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে সবাই খেই হারিয়ে ফেলেছে। অনেকেই পড়াশোনার অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে। পড়ুয়াদের নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবক প্রত্যেককেই আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।’
জলপাইগুড়ির এক অধ্যাপকের কথায়, ‘পরিস্থিতি এমন যে, আমরা দরদি হয়ে উত্তরপত্রে নম্বর দিতে চাইলেও পারছি না। বেশিরভাগ খাতাই কার্যত ফাঁকা। আর সাদা খাতায় নম্বর বসানো যায় না।’
কলেজগুলির শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে ইদানীং নানা অভিযোগ জমা পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। দিনকয়েক আগেই বিষয়গুলি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সিএম রবীন্দ্রনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কলেজ পরিদর্শক। তারপরই প্রতিটি কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ দলের সারপ্রাইজ ভিজিটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেবাশিস জানিয়েছেন, শীঘ্রই সেটা শুরু করা হবে।