শিলিগুড়ি: জামশেদপুরের টাটা স্টিল জুওলজিকাল পার্ক থেকে ম্যানড্রিল বাঁদর আনার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ল বেঙ্গল সাফারির ছোট গাড়ি। বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের নলহাটি থানার রাণিগঞ্জ মোড়গ্রাম ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। ছোট গাড়ির সঙ্গে লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় গাড়ি চালক তথা বনকর্মী সমরেশ রায়ের।
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ জামশেদপুর থেকে দুটি ম্যানড্রিল বাঁদর নিয়ে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় সাফারি পার্কের ওই দল। একটি গাড়িতে রেঞ্জার সমেত চার বনকর্মী এবং পরের গাড়িতে দুটি ম্যানড্রিল এবং পশু চিকিৎসকরা ছিলেন। বন দপ্তর সূত্রে খবর, এদিন ভোর ছয়টা নাগাদ গাড়িটির নলহাটি থানার রানিগঞ্জ মোড় গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় একটি লরির সঙ্গে বন দপ্তরের গাড়িটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এর জেরে গাড়ির সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে য়ায়। গাড়ির গতি এতটাই বেশি ছিল বেশ কিছুটা দূরে ছিটকে পরে গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চালক সমরেশ রায়ের। তাঁর ডানদিকের চোখের পাশ থেকে পুরো মুখ ভেঙে ভেতরের দিকে ঢুকে গিয়েছে। সামনেই বসেছিলেন অপর চালক পরিমল রায়। তাঁরও মাথায় এবং বুকে চোট লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি জ্ঞান হারান। পেছনে ছিলেন রেঞ্জার সোমা দাস সরকার। তাঁর মাথায় চোট লাগায় তিনিও জ্ঞান হারান। একদম পেছনে বসেছিলেন অপর এক বনকর্মী। তাঁর সামান্য আঘাত লেগেছে বলে জানা গেছে। বিকট শব্দে স্থানীয়রা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে। খবর পেয়ে নলহাটি থানার পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছোয়।
প্রথমেই আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর সেখান থেকে দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। খবর পেয়ে সকালেই বেঙ্গল সাফারি থেকে ডিরেক্টর সমেত ১০ জনের একটি দল ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এদিন বিকেলেই নলহাটি থানার পুলিশ মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করে সাফারি পার্কের কর্মীদের হাতে তুলে দিয়েছে। রাতেই দেহ শিলিগুড়ির দিকে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সাফারি পার্কের ডিরেক্টর কমল সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর বক্তব্য, এখনও সঠিক কিছু জানি না। আমরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।
অ্যানিমাল এক্সচেঞ্জ প্রথায় শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্ক থেকে দুটি ঘড়িয়াল টাটা স্টিল জুওলজিকাল পার্কে দিয়ে দুটি ম্যানড্রিল বাঁদর আনা হচ্ছিল। সেইমতো সাফারি পার্কের রেঞ্জার সহ চার জন এবং পশু চিকিৎসকদের একটি দল দু’দিন আগে সাফারি পার্ক থেকে রওনা হয়। নিয়ম রয়েছে এই ধরনের পশু আনতে বা দিয়ে আসতে হলে সবসময় পুলিশ কিংবা বন দপ্তরের এসকর্ট ভ্যান থাকতে হবে। ওই এসকর্ট ভ্যানই হুটার বাজিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনও এসকর্ট ভ্যান নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বন দপ্তর। কেন এসকর্ট নেওয়া হল না, কার গাফিলতি ছিল সেই সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।