সন্তু চৌধুরী, মালবাজার: ২২ জানুয়ারি রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ ঘিরে উন্মাদনার আঁচ দেশজুড়ে। সেই উত্তাপ এসে পড়েছে অযোধ্যা থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে, মালবাজারেও। সেই অনুষ্ঠান ঘিরে বিভিন্ন আচার-আচরণ মানতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। তার মধ্যে অন্যতম নিরামিষ ভোজন। এদিকে, সোমবার আবার বিয়ের তারিখ রয়েছে। যাঁরা যাঁরা নিরামিষ খাবেন সোমবার, তাঁরা তাহলে বিয়েবাড়িতে নিমন্ত্রিত হলে কী খাবেন? আমিষ নাকি নিরামিষ, এই দ্বন্দ্বেই এখন কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ নিমন্ত্রণকারী কনেপক্ষের।
সোমবার, ২২ জানুয়ারি একদিকে যেমন অযোধ্যায় ওই অনুষ্ঠান রয়েছে, তেমনই আবার রয়েছে এই মাসের সবথেকে বেশি বিয়ের লগ্ন। মাছ ও মাংসের পদ ছাড়া তো বিয়েবাড়ির খাওয়া কার্যত অসম্পূর্ণ। কিন্তু রাম মন্দির নিয়ে উন্মাদনার আবহে সেই মাছ-মাংস অধিকাংশ নিমন্ত্রিতের মুখে রুচবে তো? প্রশ্ন এটাই। পরিস্থিতির চাপে পড়ে আমন্ত্রণকর্তারা অনেক ক্ষেত্রেই আমিষ থেকে নিরামিষ পদের প্লেটের সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আবার নিমন্ত্রিত রামভক্তদের কথা ভেবেই একেবারে আলাদা করে নিরামিষ রান্নার আয়োজন করছেন অনেকে। দু’-একটি কনেপক্ষ তো সম্পূর্ণ নিরামিষ খাওয়াদাওয়ার আয়োজনও করছে।
মালবাজার শহরের বাসিন্দা সত্যজিৎ দত্তের মেয়ের বিয়ে সোমবার। তাঁর কথায়, ‘অন্য সময় হলে সর্বোচ্চ ৫০-৬০ জনের জন্য নিরামিষ খাবারের ব্যবস্থা রাখলেই হয়ে যেত কিন্তু এখন নিমন্ত্রিতদের বেশিরভাগই নিরামিষ খাবেন বলে জানিয়েছেন। তাই আমিষ থেকে নিরামিষ প্লেটের সংখ্যা বাড়াতে হয়েছে।’
নিলয় দাস, কৈলাস রায় সহ অন্য একাধিক অভিভাবক মেয়ের বিয়ের আয়োজনে একই কাজ করেছেন। তবে তারপরেও তাঁরা আশঙ্কায় থাকছেন, সবাই আসবে তো? শহরতলির বাসিন্দা অঞ্জনা ছেত্রীর ছেলের বিয়ে এবং বৌভাত একসঙ্গেই হবে সোমবার। অনুষ্ঠান থেকে আমিষ পদ পুরোপুরি বাদই দিয়ে দিয়েছেন অঞ্জনা। জানালেন, যাতে কারও অসুবিধে না হয় তাই এই সিদ্ধান্ত।
আর এসবের জেরে ব্যাপক চাপে পড়েছেন ইভেন্ট ম্যানেজার এবং কেটারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা। কেটারিং সংস্থার মালিক শুভঙ্কর মিত্রের কথায়, ‘শুধু সোমবার নয়, গত কয়েকদিনের যে ক’টি বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে, সেখানেও শেষ মুহূর্তে মেনুতে বদল আনতে হয়েছে আয়োজকদের অনুরোধে। বেশিরভাগ বিয়েতেই আমিষের তুলনায় নিরামিষ ভোজনকারীদের সংখ্যা ছিল বেশি।’ কেটারিং সংস্থায় কর্মরত তাপস বর্মনেরও একই কথা, ‘মটনের তুলনায় পনির সহ নিরামিষ সবজির চাহিদাই বেশি।’
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কর্ণধার ময়ূখ দাশগুপ্তরা রীতিমতো চাপে। শুধু মেনুতে বদল নয়, আলাদা করে সম্পূর্ণ নিরামিষ রান্নার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে অনেক জায়গাতেই। এক ধাক্কায় বেড়ে যাচ্ছে আয়োজনের বাজেট।