রায়গঞ্জঃ পাঁচ বছরের কন্যা সন্তানকে বিষ খাইয়ে খুন করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করল মা। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জ শহরের ইন্দিরা কলোনিতে। বর্তমানে মৃত শিশুর মা রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ বিভাগে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। পুলিশ মৃত শিশুর দেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত শিশুর নাম শ্রেসা দে(৫)। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ছিল সে। পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ছয় বছর আগে বর্ধমানের রানীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা খোকন দের সঙ্গে বিয়ে হয় রায়গঞ্জের ইন্দিরা কলোনির বাসিন্দা রিঙ্কু দাস(দ) এর। বিয়ের দুই বছরের মাথায় তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয় পারিবারিক নানান সমস্যার কারণে। এর পরই পাকাপাকি ভাবে রায়গঞ্জের ইন্দিরাকলোনীতে মায়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয় রিঙ্কু। মানুষের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে শিশুকন্যাকে নিয়ে সংসার চালাতেন। সম্প্রতি এক যুবকের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে। সম্প্রতি আইপিএলের জুয়া খেলে লক্ষাধিক টাকা হেরে যান রিঙ্কু দাসের প্রেমিক। নিজের কন্যা সন্তানের স্বর্ণ অলংকার ও একটি মাইক্রোসিনান্স থেকে ৬০ হাজার টাকা তুলে প্রেমিক যুবককে দিয়েছিল রিঙ্কু। কথা ছিল সাত দিনের মধ্যে টাকা ও স্বর্ণালংকার ফেরত দেবে রিঙ্কু দাসকে। কিন্তু সেই টাকা না দেওয়া গতকাল রাতে পাঁচ বছরের কন্যা সন্তানকে বিষ খাইয়ে খুন করে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ঘটনার পরপরই কাজ থেকে বাড়ি ফেরেন রিঙ্কু দাসের মা লক্ষ্মী দাস। বাড়িতে ফিরেই দেখেন পাঁচ বছরের নাতনির নিথর দেহ। পড়ে রয়েছে কীটনাশকের শিশি। মেয়েও বিষ খেয়ে রেলিংয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছে। লক্ষী দেবীর চিৎকারে ছুটে আসে পাড়াপড়শিরা। দুজনকেই উদ্ধার করে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে পাঁচ বছরের কন্যা সন্তানকে মৃত বলে ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। অন্যদিকে ওই শিশুর মাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে রেফার করা হয় সিসিইউ বিভাগে। বর্তমানে রিঙ্কু দাস সিসিইউ বিভাগে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
এই প্রসঙ্গে লক্ষ্মী দাস বলেন, দশ বছর আগে আমার স্বামীকে গুলি করে খুন করেছিল দুষ্কৃতীরা। মেয়েই আমার সম্বল ছিল। ছয় বছর আগে বর্ধমানের রানীগঞ্জে বিয়ে দিয়েছিলাম। জামাই এর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ডিভোর্স দিয়ে বাড়িতে চলে আসে। গতকাল হাসপাতালে ডিউটি করে বাড়িতে ফিরে দেখি এই মর্মান্তিক পরিণতি। ডায়েরির মধ্যেই সমস্ত কথা আমার মেয়ে লিখে নাতনিকে বিষ খাইয়ে খুন করে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কয়দিন ধরে আমার মেয়ে বন্দক দেওয়া গয়না ও একটি মাইক্রোফিনান্স থেকে ষাট হাজার টাকা ধার নিয়ে চিন্তায় ছিল।” এই ঘটনায় রায়গঞ্জ থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ।