শালকুমারহাট: শালকুমারহাট থেকে পলাশবাড়ি যাতায়াতে টোটোভাড়া মাথাপিছু একশো টাকা। সাতদিনে খরচ পড়বে সাতশো টাকা। দিন আনি, দিন খাই রাভাবস্তির পরিবারগুলোর কাছে এই টাকাটা অনেক। তারপরেও তাঁরা স্বস্তিতে রয়েছেন। কারণ শালকুমারহাটের জঙ্গলঘেরা রাভা বনবস্তি থেকে এবার চারজন ছাত্রীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানো ও বাড়ি ফিরিয়ে আনছেন ‘বনের কাকুরা’। কোনও পরীক্ষার্থী অসুস্থ হলে তাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। জলদাপাড়া বন দপ্তরের এই ভূমিকায় খুশি অভিভাবকরা।
রাভাবস্তিতে ৮৪টি পরিবারের বসবাস। এই বস্তির বাসিন্দাদের আর্থিক পরিস্থিতি ভালো নয়। একশো দিনের কাজ বন্ধ থাকায় বস্তির অধিকাংশ বাসিন্দাকে দিনমজুরি করতে হয়। এবছর রাভাবস্তি থেকে চারজন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে। প্রতিবছরই চার-পাঁচজন করে পড়ুয়া মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে। বস্তিতে হাইস্কুল নেই। তাই বস্তির পড়ুয়াদের কেউ শালকুমারহাট হাইস্কুল, কেউ যোগেন্দ্রনগর হাইস্কুলে পড়াশোনা করে। এবার নাসিমা রাভা, রাধিকা রাভার পরীক্ষার সিট পড়েছে যোগেন্দ্রনগর হাইস্কুলে। আর শিলবাড়িহাট হাইস্কুলে রচনা রাভা ও জয়াপ্রদা রাভা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। খুব সকালে বন দপ্তরের একটি ছোট গাড়িতে বস্তি থেকে চারজনকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। প্রথমে পলাশবাড়ি পৌঁছে দুজনকে নামিয়ে দিচ্ছে। পরে বাকি দুজনকে যোগেন্দ্রনগরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রচনার কথায়, ‘বন দপ্তরের তরফে গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়ায় আমাদের যাতায়াত নিয়ে কারও দুশ্চিন্তা থাকছে না। না হলে বস্তি থেকে অনেকটা হেঁটে তারপর টোটোয় করে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হত।’ সে জানাল, আর টোটোর ভাড়াও তো একশো টাকা। রোজ এই টাকা দিয়ে যাতায়াত করতে পারত না তারা। বৃহস্পতিবার নাসিমা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসে বন দপ্তর। পরে শিলবাড়িহাট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসেই পরীক্ষা দেয় ওই ছাত্রী।
জলদাপাড়া সাউথ রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার রাজীব চক্রবর্তীর কথায়, ‘মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন থেকে রাভাবস্তির চার ছাত্রীকে বন দপ্তরের গাড়িতে করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আবার পরীক্ষা শেষে সবাইকে বাড়িতে নিয়ে আসা হচ্ছে। এদিন এক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখানেই সে পরীক্ষা দেয়।’ বনকর্মীদের পাশাপাশি এই রেঞ্জের শালকুমারহাট বিটের বিট অফিসার সুজিত সরকারও নজরদারির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
এক ছাত্রীর বাবা বিলন রাভা জানান, বন দপ্তরের গাড়ি করে মেয়েরা যাওয়ায় তাঁরাও নিশ্চিন্ত হয়ে থাকতে পারছেন। সেইসঙ্গে গাড়িভাড়াও লাগছে না। মন্টু রাভা, দেবনাথ রাভার মতো স্থানীয় তরুণরাও বন দপ্তরের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।