Friday, May 17, 2024
Homeকলামভোট যেন সম্পদ বৃদ্ধির নিশ্চিত সিঁড়ি

ভোট যেন সম্পদ বৃদ্ধির নিশ্চিত সিঁড়ি

 

  • ভাস্কর বাগচী

গত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু পোস্ট দেখে হাসি থামিয়ে রাখা যাচ্ছে না। কেউ পোস্ট করছেন, ‘ভাবা যায়? শুধুমাত্র আমাদের সেবা করবে বলে রাজনৈতিক দলগুলি কীভাবে মারামারি করে মরছে। আমি তো পুরো চিন্তায় পড়ে গেলাম, কার সেবা নেব, কেমন যেন ঠাকুর ঠাকুর ফিল হচ্ছে।’ কারও পোস্টে উঠে এসেছে, ‘কোটি টাকার গাড়ি থেকে নেমে যদি কেউ আপনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে, তাহলে বুঝে নেবেন নির্বাচন এসে গেছে।’

আরও মজার মজার পোস্ট এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে। একজন যেমন পোস্ট করেছেন, ‘ভোট মানেই কতগুলো লোক খাটাখাটনি করে একজনের জীবনভর পেনশনের ব্যবস্থা করে।’ এই পোস্টগুলির কথা কতটা সত্যি, সেই বিতর্কে না গেলেও একটা বিষয় পরিষ্কার, ভোট মানেই কিছু লোকের স্বার্থ জড়িয়ে থাকে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় যাই লেখালেখি হোক না কেন, নির্বাচনের দিন মানুষ তার শত-সহস্র সমস্যা কাটিয়ে কিন্তু ভোটের লাইনে দাঁড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা করে।

এই যেমন শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়া ব্লকে লিউসিপাকরি গ্রামের কথা ধরা যাক, যেখানে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ। কনকনে শীত হোক, কিংবা খটখটে রোদ, হালকা গামছা গায়ে চাপিয়ে লাঙল নিয়ে ভোর থাকতেই জমিতে ছুটে যান প্রচুর মানুষ। রাতে দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনি খেটেও ভোট নিয়ে আগ্রহ কমে না বিষ্ণু মিয়াঁ, কালাচাঁদ সিংহদের। তাঁদের কাছে ভোট আর পাঁচটা উৎসবের মতো।

ভোটের দিন সকাল থেকে কাজকর্ম বাদ দিয়ে ছাতা মাথায় ভোটের লাইনে কয়েক ঘণ্টা ঠাঠা রোদে দাঁড়িয়ে নাগরিক অধিকার প্রয়োগে তাঁদের যেন অপার শান্তি। তবে ভোট এলে কোচবিহারের দিনহাটার গ্রামীণ এলাকাই হোক কিংবা শিলিগুড়ির অদূরে ফাঁসিদেওয়ায় প্রার্থীদের নতমস্তকে ভোট ভিক্ষার বিষয়টি বেশ উপভোগ করেন সাধারণ মানুষ।

প্রার্থীরা জানেন, বছরে একবার নতমস্তক হয়ে ভোটে জিততে পারলেই পাঁচ বছরের জন্য নিশ্চিন্ত সম্পদ বৃদ্ধির সিঁড়ি তৈরি। সেই সম্পদ কারও বেড়ে যায় কয়েক লক্ষ, কারও কয়েক কোটি। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্য? তাদের দায়িত্ব শুধু ভোট দেওয়া। ব্যাস, আর কিছু নয়। আমজনতার রায়ে নেতা হওয়া যায়। ভাগ্য সহায় থাকলে কপালে মন্ত্রী হওয়ার শিকেও ছেঁড়ে। গত প্রায় ১৫ বছরে নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের দেওয়া সম্পত্তির হিসেব সেই তথ্যই জানান দিচ্ছে।

উলটো দিকে তীব্র মূল্যবৃদ্ধির দাপটে নুন আনতে পান্তা ফুরাচ্ছে সাধারণের। নেতা-মন্ত্রীরা এর সাফাই দেবেন অনেক রকম। বাস্তব চিত্র বলছে, গত পাঁচ বছরে উত্তরবঙ্গের সাংসদদের সম্পদ বেড়েছে অনেক। সাধারণ ভোটাররা এতে কিন্তু নতুন কিছু দেখেন না। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর লোকসভাই হোক কিংবা বিধানসভা ভোটে প্রার্থীদের সম্পত্তি কখনও দ্বিগুণ আবার কখনও তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। এটা নির্বাচন কমিশনের তথ্যে স্পষ্ট।

দার্জিলিং লোকসভা আসনে এবারের বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্ট গত মেয়াদের সাংসদ। গতবার ও এবার মনোনয়নপত্র পেশের সময় তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাঁর গত পাঁচ বছরে অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। স্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে প্রায় ১১ কোটি। স্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে তাঁর স্ত্রীরও। গত পাঁচ বছরে বেড়েছে ১ কোটিরও বেশি। শুধু রাজু নয়, সম্পদ গত ৫ বছরে বেড়েছে জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়, বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারেরও। সুকান্তর অস্থাবর সম্পত্তি গত ৫ বছরে বেড়েছে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা, স্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৩ লক্ষ টাকার মতো। সুকান্তবাবুর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি গত ৫ বছরে বেড়েছে প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা।

তবে যে হারে তাঁকে নিয়ে আলোচনা, সেই হারে সম্পত্তি বাড়েনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের। ২০১৯ সালে তিনি যে তথ্য নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন, সেই অনুযায়ী গত ৫ বছরে তাঁর অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। স্থাবর সম্পত্তি অবশ্য একই রয়েছে গত পাঁচ বছরে। কিন্তু পেশায় চিকিৎসক জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অনেকটাই বেড়েছে গত ৫ বছরে। ২০১৯ সালে জয়ন্তর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ১৪ লক্ষের কিছু বেশি, সেটা এবার দ্বিগুণ হয়েছে। স্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা। জয়ন্তর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ১১ লক্ষ টাকা, স্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা।

সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে কে কী ভাবল, তা নিয়ে নেতা-মন্ত্রীদের তেমন মাথাব্যথা থাকে না। ভাবটা এমন, ভোট আসবে, ভোট যাবে, দু’দিন আলোচনা হবে এসব নিয়ে, তারপর আবার সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন নিজ নিজ কাজে। দেখতে দেখতে কেটে যাবে পাঁচ বছর। আবার সময় হলে ভোটপ্রার্থীরা আসবেন নতমস্তকে। সাধারণ মানুষও গলা ফাটিয়ে আবার কোনও প্রার্থীর সমর্থনে ভোট চাইতে বেরিয়ে পড়বে।

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

0
Aishwarya Rai Bachchan কর্মই ধর্ম! ভাঙা হাতেই কানের রেড কার্পেটে ঐশ্বর্য, তবুও পাশে নেই অভিষেক বচ্চন৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের দ্বিতীয় দিনে লাল গালিচায় সম্মোহনী জাদু...
weather update in west bengal

Weather Report | তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে অস্বস্তি, সোমেই হাওয়া বদল বঙ্গে

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ফের তীব্র গরমে পুড়ছে রাজ্যবাসী। শনি ও রবিবার উত্তর ও দক্ষিণ দুই বঙ্গের ছয় জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি...

Sex Worker | ঘরের বৌকে যৌনকর্মী হতে চাপ! কাঠগড়ায় স্বামী-শাশুড়ি

0
শিলিগুড়ি: সন্তান জন্মের পর থেকেই বাড়ির বৌকে যৌন ব্যবসায় নামানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন খোদ স্বামী ও শাশুড়ি। আর এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে...

Siliguri | গৃহবধূকে দুই মেয়ে সহ বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ শাশুড়ির বিরুদ্ধে

0
শিলিগুড়ি: স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই গৃহবধূকে অত্যাচারের অভিযোগ শাশুড়ি ও ননদের বিরুদ্ধে। দুই কন্যা সন্তান সহ তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল...

Manikchak | তৃণমূল অঞ্চল সভাপতিকে প্রাণে মারার চেষ্টার অভিযোগ, কাঠগড়ায় কংগ্রেস

0
মানিকচক: তৃণমূল (TMC) অঞ্চল সভাপতিকে প্রাণে মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠল কংগ্রেসের (Congress) বিরুদ্ধে। মালদার মানিকচকের (Manikchak) গোপালপুরের ঘটনা। জানা গিয়েছে, দলীয় কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন...

Most Popular