সানি সরকার, শিলিগুড়ি: প্রকৃতির রোষে দার্জিলিং চা। যে পানীয়র কদর বিশ্বজোড়া, তাতেই এবার পড়েছে প্রকৃতির কুনজর। আবহাওয়ার পরিবর্তনে এবছরের শুরুটা কেটেছে শুখা। দিনের পর দিন বৃষ্টিহীন থাকায় নতুন পাতা বের হতে পারেনি সময়ে। যার জন্য পিছিয়ে গিয়েছে ফার্স্ট ফ্লাশের মরশুম। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে যখন গাছে নতুন পাতা বের হতে শুরু করেছে, তখন বুধবার ভারী শিলাবৃষ্টি বিপদ ডেকে এনেছে ফার্স্ট ফ্লাশে। তামসং, গোল্ডেন ভ্যালির মতো কয়েকটি চা বাগানে এতটাই ভারী শিল আছড়ে পড়েছে যে, কবে নতুন পাতা বের হবে, তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন চা বাগান মালিকরা। শুধু পাহাড় নয়, শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে ডুয়ার্সের বেশ কয়েকটি চা বাগানে। তবে এখনও তরাই অঞ্চলে তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।
টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের আধিকারিক তৃণা মণ্ডল বলছেন, ‘মঙ্গলবার ডুয়ার্সে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় সেখানকার বেশ কয়েকটি চা বাগান ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে বুধবার যে ধরনের শিলাবৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ে, তাতে চরম ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবশ্য সমস্ত বাগান থেকে রিপোর্ট আসার পরই ক্ষতিটা কী পরিমাণ, তা বোঝা সম্ভব হবে।’
বজ্রপাত সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস কয়েকদিন ধরেই দিচ্ছে আবহাওয়া দপ্তর। গত শনিবার থেকে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু এলাকায় বৃষ্টিও হচ্ছে। ঝোড়ো হাওয়াও বইছে। যেমন বুধবার শিলিগুড়ির সেবক রোড, সুকনা সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে আছড়ে পড়েছে শিল। সোনাদা, জোড়বাংলো এলাকায় এতটাই ভারী শিল পড়েছে যে, ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এখানকার চা বাগানগুলি। ক্ষতিগ্রস্ত এক বাগানের ম্যানেজার বলছেন, ‘যেভাবে গাছ নষ্ট হয়েছে, তাতে নতুন পাতা আসতে অন্তত ২০ দিন সময় লাগবে। ততদিনে ফার্স্ট ফ্লাশের সময় শেষ হয়ে যাবে। ভালো দাম তো পাওয়া যায় ফার্স্ট ফ্লাশেই।’
ফার্স্ট ফ্লাশে চা পাতা তোলার দিন ২২ ফেব্রুয়ারি নির্দিষ্ট থাকলেও গাছে পাতা না আসার জন্য তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। এই দেরির মূলে রয়েছে দিনের পর দিন বৃষ্টিহীন পরিস্থিতি। শুখা মরশুমের জন্য ৫০ শতাংশ উৎপাদন মার খেয়েছে বলে বক্তব্য চা বাগান মালিকদের।
নুরবং চা বাগানের মালিক সতীশ মিত্রুকার বক্তব্য, ‘দার্জিলিং চায়ের দুর্দিন চলছে। আবহাওয়ার যেভাবে পরিবর্তন ঘটছে, তাতে আগামীতে দার্জিলিং চায়ের উৎপাদন ব্যাপকভাবে মার খাবে বলে মনে হচ্ছে।’
শিলাবৃষ্টির জেরে পাহাড়ের চা বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, সান্দাকফুতে ডেকে এনেছে খুশির বান। অনেকটা তুষারপাতের মতো শ্বেতশুভ্র হয়ে ওঠে সান্দাকফু। এমন আবহাওয়া পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন থাকবে বলে হাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস। আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলছেন, ‘কিছুটা জলীয় বাষ্প থাকায় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পাহাড়ি এলাকায় অতি সহজেই বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির সঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে শিল আছড়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন থাকবে।’