সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি: একে আইপিএলে রক্ষে নেই, লোকসভা ভোট দোসর। প্রশ্ন একটাই, কোন দল জিতবে। তা নিয়ে চলছে বেটিংয়ের রমরমা কারবার (Betting Racket)। সাধারণত এপ্রিলের প্রথম দিকেই শুরু হয়ে যায় আইপিএল (IPL)। সেইসঙ্গে শুরু হয়ে যায় বেটিংও। আর এবার তো সেইসঙ্গে এপ্রিলেই লোকসভা নির্বাচনও (Lok Sabha Election 2024)। কোন আসনে কোন দল জিতবে, কত মার্জিনে জিতবে, তা নিয়ে চলছে বাজি ধরাধরি। এখন তো এসব বেটিংয়ের সব থেকে সুবিধাজনক পদ্ধতি হল মোবাইল অ্যাপ। অনলাইন বেটিং (IPL Betting) সাইটগুলোয় আইপিএলকে টেক্কা দিচ্ছে লোকসভা ভোট নিয়ে বাজি খেলার প্রবণতা। শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গ থেকেই লোকসভা ভোটকে কেন্দ্র করে কয়েকশো কোটি টাকার বাজি খেলা হবে বলে জানালেন বেটিং সাইটের সঙ্গে যুক্ত এক কারবারি।
বর্তমানে উত্তরবঙ্গের ছোট-বড় শহরগুলোয় বেটিং সাইটের কাজকর্ম দেখার দায়িত্ব রাজস্থানের ওই বাসিন্দার উপর। জানালেন, ‘২০১৬ সালে এরাজ্যে ভোটের বাজিতে খুব বেশি আগ্রহ দেখতে পাইনি আমরা৷ তবে ২০১৯ এবং ২০২১ সালে দারুণ ব্যবসা হয়েছে। এবারেও উত্তরবঙ্গে দারুণ সাড়া আছে লোকসভা ভোটে।’
আইনিভাবে নিষিদ্ধ হলেও এদেশে অনলাইন বেটিং সাইটের অভাব নেই। সুরাট, নভি মুম্বই, ভদোদরা, নয়ডা থেকে মূলত এই সাইটগুলো চালানো হয়। এরপর রাজ্যে রাজ্যে সাইটগুলির এক বা একাধিক সুপার ডিস্ট্রিবিউটার রয়েছে। তাদের অধীনে কাজ করে সাব-ডিস্ট্রিবিউটাররা। তাদেরও নীচে রয়েছে রিটেল সেলার। তাদের হাতে থাকে সুপার আইডি। এদের হাতে নগদ টাকা দিলেই নির্দিষ্ট সাইটের আইডি-পাসওয়ার্ড পাওয়া যায়।
সাধারণত প্রতি পয়েন্ট হিসেবে ১০০ বা ৫০ টাকা টাকা নগদে পেলেই সেই পরিমাণ পয়েন্ট পেয়ে যান বাজি লাগানোয় আগ্রহী যে কেউ। বাজিতে হারজিত যা-ই হোক, পুরো লেনদেন হয় নগদে। সুপার ডিস্ট্রিবিউটার থেকে রিটেলার সবাই হয় পার্সেন্টেজ হিসেবে, না হয় কমিশনের হিসেবে কাজ করে।
এদেশে আইনিসিদ্ধ না হলেও ইংল্যান্ডে বেটিং বৈধ। সেদেশের দুটো বড় সংস্থার হাতেই আন্তর্জাতিক অনলাইন বেটিং বাজারের সিংহভাগের দখল। এই সংস্থাগুলোই বাজির দর ঠিক করে। এদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক রয়েছে সর্বস্তরে। সেই সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সাইটগুলোয় বাজির দর দেওয়া হয়। এই মুহূর্তে বেটিং সাইটের দরে দেশে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।
উত্তরবঙ্গে সব থেকে বেশি জনপ্রিয় সাইটগুলোর হিসেবে এই মুহূর্তের বেটিং দরে বিজেপি ৩১৬ থেকে ৩১৯টি আসন পাবে। সপ্তাহখানেক আগে বিজেপির পক্ষে ২৮৬ থেকে ২৮৮ আসন জয়ের ওপর দর দেওয়া হচ্ছিল। বর্তমানে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষে রয়েছে ৪৫ থেকে ৪৭ আসনে জয়ের বাজির দর। সপ্তাহখানেক আগে তা ছিল ৫৩ থেকে ৫৫ আসনের দরে।
দেশের পাশাপাশি বড় রাজ্যগুলিতে ভোটের ফলাফলের ওপরও বাজি খেলার সুযোগ দিচ্ছে সাইটগুলো৷ এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পক্ষে ২১ থেকে ২৩টি আসন জয়ের কথা বলছে সাইটগুলো। লোকসভা ভোট বলে বিজেপি ও কংগ্রেসের দর মিলছে এই সাইটগুলোয়। আঞ্চলিক বা রাজ্য দলের পক্ষে বাজি খেলার সুযোগ নেই। আরেক ধরনের সাইটে বিজেপির পক্ষে দেশে ৩০১ থেকে ৩০৩টি আসন জয়ের দর মিলছে। এরাজ্যে সেই দর ১৯ থেকে ২০টি আসনে।
শিলিগুড়ি থেকে গোটা উত্তরবঙ্গে বেটিং ব্যবসা সামলান এমন এক সাব-ডিস্ট্রিবিউটার বলেন, ‘ভোট যত এগোবে ততই আসন সংখ্যা বদল হবে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট নিয়ে উত্তরবঙ্গে অন্তত আড়াইশো কোটির অনলাইন বাজি হয়েছিল। এবারে সেই অঙ্ক ছাড়িয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।’