নাগরাকাটাঃ ভোটের আগে খুলে যাচ্ছে বন্ধ ডুয়ার্সের বামনডাঙ্গা-টন্ডু চা বাগান। সোমবার থেকে ফের বাগানটি স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিন সেখানে ৩ পরিচালক ঢুকেও গিয়েছেন। রবিবার বাগান খোলাকে নিয়ে শ্রমিক প্রতিনিধিদের একাংশের সঙ্গে মালিকপক্ষের একটি বৈঠক হয়। ওই দ্বিপাক্ষিক আলোচনা মোতাবেক ঠিক হয়েছে বাগান খোলার পর বুধবারের মধ্যে বকেয়া থাকা দুটি পাক্ষিক মজুরির মধ্যে একটি দিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ১৫ দিন পর চালু কাজের মজুরির সঙ্গে মিলবে বকেয়া বোনাসের ৯ শতাংশও। বাকী এক পাক্ষিক সপ্তাহের মজুরিও এরপর দ্রুত দিয়ে দেওয়া হয়। বাগানটি খুলতে চলায় ভোট বাক্সে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এর ডিভিডেন্ড নিতে যে মরীয়া হবে তা বলাই বাহুল্য। অন্যদিকে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বাগান খুলুক এটা তাঁদেরও দাবি। তবে আইনি ভাবে সবকিছু হতে হবে। বামনডাঙ্গা-টন্ডুর নয়া কর্ণধার ঋত্ত্বিক ভট্টাচার্য বলেন, আলোচনা সাপেক্ষে সবকিছু ঠিক হয়েছে। বাগান চালাতে শ্রমিকদের কাছ থেকে সবরকম সহযোগিতা পাব বলেই আশা করি। মালবাজারের সহকারী শ্রম কমিশনার প্রণব কুমার দাস বলেন, দ্বিপাক্ষিক স্তরে কি আলোচনা হয়েছে জানা নেই। নজর রাখছি
উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রত্যন্ত বাগান হিসেবে পরিচিত বামনডাঙ্গা-টন্ডুতে সমস্যার সূত্রপাত গত পুজোর আগে থেকে। ৩ অক্টোবর রাতে সেখানে লক আউটের নোটিশ জারি করে ততকালীন পরিচালকরা বেপাত্তা হয়ে যান। বিপাকে পড়েন ১১৭৪ জন শ্রমিক। একই মালিকানাধীন সামসিং এ তালা ঝোলে ১৬ অক্টোবর। এমন পরিস্থিতিতে সেসময় শ্রম দপ্তরের পক্ষ থেকে আলাদা করে মালিক ও শ্রমিকদের সাথে দুটি বৈঠক হয়। জট খোলার জন্য জলপাইগুড়িতে ডেপুটি লেবার কমিশনারের দপ্তরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও ডাকা হয়। সেখানে মালিকদের কেউ হাজির হন নি। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মালিকদের প্রতিনিধিকে তলব করা হয়। ১৬ অক্টোবর একই মালিকানাধীন দুই বাগানের পরিচালকরা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় আর্থিক সংকটের কারনে আপাতত বাগান চালানো যাচ্ছে না। তবে তাঁরা না ফেরা পর্যন্ত যদি শ্রমিকরা কাঁচা পাতা তুলে বিক্রি করেন তাতে তাঁদের কোন আপত্তি নেই। এরপর নভেম্বরে বর্তমান মালিকপক্ষই বামনডাঙ্গা-টন্ডু খুলতে এগিয়ে এলেও তা বাস্তবায়িত হয় নি। এজন্য নানা ধরনের জটিলতাকে দ্বায়ী করেছিলেন তাঁরা। তবে সামসিং বাগানটি ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁদের মাধ্যমেই চলছে।
এদিকে গত ৭ মাস ধরে বাগান বন্ধ হয়ে থাকায় শ্রমিকদের পরিস্থিতি বর্তমানে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারন করছে। দলে দলে শ্রমিক স্ত্রী-সন্তানদের ছেড়ে বিকল্প আয়ের সন্ধানে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি প্রেম ছেত্রী বলেন, এদিন শ্রমিক প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে মালিকপক্ষের সাথে বাগান খোলা নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়। সোমবার থেকে ফের বামনডাঙ্গায় সাইরেন বাজবে। শ্রমিকরা যে অত্যন্ত সংকটে ছিল তা নিয়ে কোন সংশয় নেই। নাগরাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি সঞ্জয় কুজুর বলেন, আমাদের লাগাতার প্রয়াসের ফলে বন্ধ বাগানটি অবশ্য স্বাভাবিক হচ্ছে। এর থেকে ভাল খবর আর কিই বা হতে পারে। যদিও ওই বাগানের বিজেপির গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ও শ্রমিক নেতা লক্ষ্ণণ কাওয়ার বলেন, কি চুক্তি হয়েছে তা আমাদের জানা নেই। তবে আইন মেনে বাগান খুলুক এটা আমরাও চাই। বিষয়টির সাথে শ্রমিকদের ভবিষ্যত জড়িত। বকেয়া পাওনা গন্ডাও মেটাতে হবে।