শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ি মহকুমায় নদী থেকে বালি পাচার এবং এই পাচারের সময় গাড়ির ধাক্কায় হতাহতের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। এমন ঘটনা যাতে আর না হয়, সেই দাবিতে প্রচুর আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু বাস্তব বলছে, নিয়ন্ত্রণ দূরে থাক, পাচারের ঘটনা নিয়মিত বাড়ছে। এর পিছনে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশের মদত যেমন রয়েছে, তেমনই প্রশাসনের একটা বড় অংশও এর সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, পরিবহণ দপ্তর, পুলিশ এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের একাংশের প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে। যার ফলে দিনের পর দিন মহকুমার বিভিন্ন নদী থেকে বালি, পাথর পাচার চললেও প্রশাসন নির্বিকার।
দার্জিলিংয়ের জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক রামকুমার তামাং বলেছেন, ‘প্রতিটি ব্লকেই বালি, পাথর পাচার রুখতে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়।’ দার্জিলিংয়ের আঞ্চলিক পরিবহণ দপ্তরের দাবি, ‘বেআইনি গাড়ি, ট্র্যাক্টরে পাচার রুখতে প্রতিনিয়ত এমভিআই বিভাগ অভিযান করছে। অনেক গাড়ি আটকও করা হয়েছে।’
শিলিগুড়ি মহকুমাজুড়ে কয়েক বছর ধরে রয়্যালটির তোয়াক্কা না করে নদী থেকে অবাধে বালি এবং পাথর পাচার চলছে। এই পাচারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ডাম্পার, শক্তিমান ট্রাক সহ অন্যান্য গাড়ি এবং ট্র্যাক্টর। মহকুমায় প্রায় ২৫ হাজার ট্র্যাক্টর রয়েছে। প্রত্যেকটি ট্র্যাক্টরে পণ্য পরিবহণের জন্য ডালা যুক্ত করলেও পরিবহণ দপ্তরের অনুমতি নেওয়া হয় না। সিংহভাগ ট্র্যাক্টরচালকই নাবালক। অথচ পরিবহণ দপ্তরের ভ্রূক্ষেপ নেই। অন্যদিকে, ডাম্পারগুলিও বালি, পাথর বোঝাই করে গ্রামের রাস্তা দিয়ে দাপিয়ে চলাচল করছে বলেই নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। মাটিগাড়ায় বালাসন নদীতে অবৈধ খননের জেরে গত বছর বানিয়াখাড়ি হনুমানবস্তির মাটি চাপা পড়ে দুটি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। তারপরেও প্রশাসনের টনক নড়েনি।
কয়েকদিন আগে ফাঁসিদেওয়া ব্লকের ঘোষপুকুরের কচুমণিতে পাচারের প্রতিবাদে স্থানীয়রা একটি গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেন।
তাঁদের অভিযোগ, পুলিশকে বারবার জানিয়েও বালি পাচার বন্ধ করা যায়নি। মাটিগাড়া ব্লকের আঠারোখাইয়ের বিডিও অফিস হয়ে হালের মাথা পর্যন্ত রাস্তাটি দিয়েও প্রতিদিন প্রচুর ডাম্পার, ট্র্যাক্টর বালি, পাথর পাচার করে। এখানে তো একাধিকবার ডাম্পারের ধাক্কায় লোকজন জখম হয়েছেন। কিছুদিন আগে এই রাস্তাতেই সুমিত্রা পাল নামে এক বৃদ্ধাকে ডাম্পার ধাক্কা মারে। সেই মহিলা এখনও ভাঙা পা নিয়ে চিকিৎসার জন্য ব্যতিব্যস্ত। এসবের প্রতিবাদে স্থানীয়রা একাধিকবার রাস্তা অবরোধ করেছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
মঙ্গলবার ফাঁসিদেওয়ার গঙ্গারামে ফের এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। সাইকেলে চেপে দুই ভাই স্কুলে যাচ্ছিল। পথে পাথর পাচারকারী একটি ট্র্যাক্টর সেই সাইকেলে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই একটি শিশুর মৃত্যু হয়। একজন এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। এই ঘটনার পরে পুলিশ বালি পাচার রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার লিখিত আশ্বাস দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু মানুষের প্রশ্ন, প্রশাসন এতদিন কেন ব্যবস্থা নেয়নি? সবকিছু জেনে বুঝেও প্রশাসন এভাবে আর কতদিন চোখ বুজে থাকবে সেই প্রশ্ন উঠেছে।