হেমতাবাদঃ বাইরে কারা? তাঁদের ফেরানো দরকার। ভোট যে চলে এল! ভোট বড় বালাই। তাই ভিনরাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে মরিয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দল। প্রচারপর্বে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই টের পেয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। এই শ্রমিকদের ভোট উলটেও দিতে পারে পাশার দান। তাই ভোটের আগে শুরু হয়েছে তাঁদের ঘরে ফেরানোর কাড়াকাড়ি। তৃণমূল আর বামেদের তরফে ইতিমধ্যেই বুথ কমিটিগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে, তালিকা তৈরি করে ভিনরাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। ভোটের আগে তাঁদের ফিরিয়ে আনতেই হবে ঘরে। গেরুয়া শিবির তো এই শ্রমিকদের নাম ঠিকানা জোগাড় করতে বিশেষ দলই গঠন করেছে।
রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের কত এমন ভোটার এই মুহূর্তে ভিনরাজ্যে? সরকারি তথ্য বলছে, এই জেলায় রয়েছেন ৬০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের সিংহভাগই বর্তমানে বাইরে কর্মরত। রাজ্যের শাসকদল বলছে, জেলায় পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার। বিরোধীদের হিসাবে সংখ্যাটা আরও বেশি। প্রায় ৮৫ হাজারের মতো।
প্রশাসনের অন্য একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, জেলার প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ কর্মসূত্রে রয়েছে গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুতে। তাঁদের বেশিরভাগই নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছেন। তাঁরা প্রত্যেকে ভোটার। এঁরা মূলত রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, করণদিঘি, চাকুলিয়া ও গোয়ালপোখর এলাকার বাসিন্দা।
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে চিন্তা যে রয়েছে তা স্বীকার করে নেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল। তিনি বলেন, ‘প্রচুর শ্রমিক বাইরে আছে। বুথ কমিটিগুলিকে তাঁদের বাড়িতে যোগাযোগ করে নামের তালিকা তৈরি করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওঁদের ফেরাতে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক আনহারুল হক বলছেন, ‘শুধুমাত্র রায়গঞ্জ মহকুমা থেকে এক লক্ষের বেশি শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্যে রয়েছেন। তাঁদের কিছু অংশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল, পরিবারের লোকজন চাইলেও তাঁদের অনেকে ভোট দিতে বাড়ি ফিরতে চাইছেন না।’
এমন কেন? রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা রেজাউল হক বলেন, ‘ছেলে ফোন করে জানিয়েছে এখন খুব কাজের চাপ। তাছাড়া এত টাকা খরচ করে আসতে পারবে না।’ প্রমীলাদেবীর দুই ছেলে কেরলে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছেন। মহারাষ্ট্রে কাজ করছেন হেমতাবাদের বাহারাইল গ্রামের দিলওয়ার হোসেনের ছেলেও। ছেলেরা তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন, শুধু ভোট দেওয়ার জন্য এত টাকা খরচ করে, বেশ কিছুদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন না।
বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার জানান, ‘প্রতিটি ব্লকের দলীয় নেতৃত্বের কাছে নামের তালিকা পাঠিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।