- রুদ্র সান্যাল
মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরোতেই অনেকের অভিভাবকই চিন্তায় তাঁদের সন্তান আশানুরূপ ফল না করার কারণে। মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষকদের বলেন, ‘স্যর ছেলেটা সায়েন্স নিয়ে পড়তে চায়, পড়াব কি?’ অথবা ‘স্যর মেয়েটার সায়েন্স-এ মাথা নেই। ওকে আর্টস পড়াব।’ আগে থেকেই তাঁরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, তার সন্তান কী পড়বে। গ্রামীণ এলাকার একটা উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে চাকরি করার সুবাদে বুঝেছি, অনেক ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকরা ঠিক বুঝতে পারেন না তাঁদের সন্তান কী পড়তে ইচ্ছুক বা কী বিষয়ে তার আগ্রহ। হয়তো সেই ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাও সঠিকভাবে তা অনুধাবন করতে পারে না। সেই কারণে একজন শিক্ষক হিসেবে তাকে সঠিক পরামর্শ দেওয়াটাও প্রায়ই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। অনেকের কাছ থেকে নানা রকম উপদেশ পেয়ে সেই ছাত্রছাত্রী যখন যে বিষয় নিয়ে পড়তে চায়, পরবর্তীকালে দেখা যায় সেখানে অনেক গলদ রয়ে গিয়েছে। সেই কারণে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে হয় রেজাল্ট খারাপ অথবা আশানুরূপ রেজাল্ট হয় না। তখন মানসিকভাবে তারা বিধ্বস্ত হয়ে যায়। সেই কারণে মাধ্যমিকের পর বিষয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শহর এলাকায় মাধ্যমিক পরীক্ষার অনেক আগে থেকেই বিশেষ করে দশম শ্রেণি থেকেই বেশিরভাগ অভিভাবক অনেক সচেতন থাকেন তাঁদের সন্তানের বিষয়ে। কিন্তু গ্রামীণ প্রান্তিক এলাকায় এখনও বহু অভিভাবক নিজেরাও সেভাবে সচেতন নন, কারণ এক্ষেত্রে তাঁদের দোষ দেওয়াও ঠিক না। অনেকেই প্রথম বা দ্বিতীয় প্রজন্মের শিক্ষিত মানুষ। স্বাভাবিকভাবে যুগের দাবি অনুযায়ী কী ধরনের বিষয় নিয়ে তাঁর সন্তান পড়াশোনা করবে, সে বিষয় স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা ওয়াকিবহাল নন। অনেক ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির অভিভাবকদের ইচ্ছে থাকলেও শহরের ভালো স্কুলে বিজ্ঞান নিয়ে সন্তানকে পড়াতে পারেন না। তাই তাঁর সন্তান গ্রামীণ স্কুলেই যেখানে বিজ্ঞান নেই, সেখানে কলা বিভাগের বিষয় নিয়ে পড়তে বাধ্য হয়। ফলে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে রেজাল্ট আশানুরূপ হয় না। এটা সত্যিই দুঃখজনক।
মাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে শুধুই কলা বিভাগ বা সায়েন্স অথবা বাণিজ্য শাখা ছাড়াও এখন বহু স্কুলেই ভোকেশনাল বা কারিগরি শিক্ষার অনেক শাখা খুলে গিয়েছে। বিশেষ করে আমাদের উত্তরবঙ্গের মতো পর্যটন এলাকার কথা মাথায় রেখে, ট্যুরিজম, হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট অথবা হোটেল ম্যানেজমেন্ট এবং অটোমোবাইল ও হেলথকেয়ার বিষয়ে পড়াশোনা করা যেতেই পারে। তাছাড়া নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে যে কোনও বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা যায়। যদিও এখন ডেটা সায়েন্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইকনমিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স বা রাশিবিজ্ঞান নিয়ে পড়লে চাকরির রাস্তা অনেকটাই খোলা থাকে। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে, প্রান্তিক এলাকার স্কুলগুলোতে এই সমস্ত বিষয়ে শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই ইচ্ছে থাকলেও উপায় থাকে না। তবুও বাস্তববাদী হওয়া দরকার বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে। কারণ একটা ভুল সিদ্ধান্তই ধ্বংস করে দিতে পারে একজন ছাত্রছাত্রীর জীবনের অনেক স্বপ্ন। সেটাও কিন্তু কখনোই কাম্য নয়।
(লেখক বিধাননগর সন্তোষিণী বিদ্যাচক্র হাইস্কুলের শিক্ষক)