রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: পাপিয়ার নজর গ্রামে, শহর চষে বেড়াচ্ছেন গৌতম, আবার পাহাড় সামলাচ্ছেন অনীত থাপা। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী জিতুন বা হারুন নিজের মানরক্ষায় এলাকায় লিড দেওয়াই যেন এখন লক্ষ্য তিন নেতা-নেত্রীর। আর তাই দিনরাত এক করে নিজের এলাকায় ঘাম ঝরাচ্ছেন তিনজনই। অনীত বলেছেন, ‘পাহাড় থেকে আমরা গোপাল লামাকে লিড দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছি। সমতলটা তৃণমূল বুঝে নেবে।’ তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষের দাবি, ‘শুধু গ্রামাঞ্চল নয়, শিলিগুড়ি শহরেও নিয়মিত প্রচারে যাচ্ছি।’
দার্জিলিং লোকসভা আসন আজ পর্যন্ত দখল করতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৪ সালে বাইচুং ভুটিয়া ও ২০১৯ সালে অমর সিং রাইকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। এবার গোপাল লামাকে প্রার্থী করে দার্জিলিং দখলের জন্য ঝাঁপিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। বিগত বছরগুলির তুলনায় এবারের দার্জিলিং লোকসভা আসনের ভোটচিত্র অনেকটাই আলাদা। সমতলে পুরনিগম, মহকুমা পরিষদ পুরোটাই তৃণমূলের হাতে। অন্যদিকে পাহাড়ের শাসক অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা (বিজিপিএম) তৃণমূলের জোটসঙ্গী। ফলে ভোটের সমীকরণও ওলটপালট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তৃণমূলের অনেকেই মনে করছেন, এবার সমতলেও যেভাবে জোরদার প্রচার হচ্ছে, তাতে শুধু চোপড়া নয়, শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি এবং ফাঁসিদেওয়াতেও গোপাল লামার লিড পাওয়া উচিত। তবে, প্রার্থী হারলেও যাতে তাঁদের প্রশ্নের মুখে পড়তে না হয় সেইজন্য সজাগ তিনমূর্তি। এঁরা হলেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব, তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ এবং বিজিপিএম সুপ্রিমো অনীত থাপা।
পাপিয়া প্রার্থী ঘোষণার পর সকাল থেকে রাত গ্রামের পর গ্রাম ছুটছেন। কখনও প্রার্থীকে নিয়ে কখনও আবার দলের নেতা-নেত্রীদের নিয়ে মানুষের দরজায় গিয়ে ভোট চাইছেন। শহরে তাঁকে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। কারণ তিনি ভালোভাবেই জানেন, ফলাফল খারাপ হলে পদ থেকে সরানোর জন্য অনেকেই মুখিয়ে রয়েছেন। বিশেষ করে শহরের গোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়, সেটা বিলক্ষণ বোঝেন পাপিয়া। তাই গোপাল লামা হারলেও গ্রামের তিনটি বিধানসভা থেকে লিড দিতে পারলে তাঁর বলার জায়গা থাকবে।
একইভাবে পুরনিগম এলাকায় লিড দিয়ে নিজের মান বাঁচাতে মরিয়া গৌতম। পুরনিগমের ১৪টি ওয়ার্ড জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ছে। সেই ১৪টি ওয়ার্ডেও মাটি কামড়ে থেকে প্রচার করেছেন গৌতম। শুক্রবার দিনভর ওই এলাকার ভোটে তাঁর নজর ছিল। দার্জিলিং লোকসভার মধ্যে থাকা ৩৩টি ওয়ার্ডেও প্রার্থী গোপাল লামাকে লিড দিতে না পারলে তাঁকেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। সেইজন্য ৪৭টি ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল প্রার্থীদের লিড দিতে চান গৌতম।
একইভাবে রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় পাহাড়ের শাসনক্ষমতায় রয়েছেন অনীত। পাহাড়ে তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে প্রচারের পুরো দায়িত্ব তাঁর দলই নিয়েছে। অনীত পাহাড় দেখে নেবেন বলে প্রথমেই তৃণমূলকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। গোটা পাহাড়ে সেখানে তৃণমূলের ঝান্ডা পর্যন্ত নেই। অনীতের বক্তব্য, ‘সমতলে তৃণমূল যাই করুক না কেন পাহাড়ে আমরা লিড দেব, এটাই লক্ষ্য।’