প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি বিমা কোম্পানির এজেন্টদের সঙ্গে তুলনা করলেন কংগ্রেসের লোকসভা দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। ‘মুম্বই সামিট’এর ঠিক আগে বুধবার কাকভোরে ১০ জনপথে পৌঁছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন অভিষেক। বিরোধী দলের প্রভাবশালী দুই নেতার মধ্যে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে এদিন দিনভর চলে জল্পনা। এই প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বৃহস্পতিবার দিল্লির সাউথ অ্যাভিনিউ লেনে নিজ সরকারি বাসস্থানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সদ্য সাসপেনশন মুক্ত হওয়া অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
‘মুম্বই সামিট’এর মঞ্চেই যেখানে দেখা হওয়া অনিবার্য, তার বদলে বুধবার ভোররাতে কী এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল যা নিয়ে রাহুল গান্ধির মুখোমুখি হলেন অভিষেক, সে প্রশ্নের জবাবে অধীরের তির্যক মন্তব্য, ‘রাহুল গান্ধি সর্বভারতীয় নেতা। তাঁর সময়ের দাম আছে৷ তিনি হয়তো বললেন, তাঁর সময় নেই, তা কখন সময় হবে? চারটের সময়! তা-ই হয়তো তিনি (অভিষেক) কাকভোরে দেখা করতে এসেছেন।’ অধীর এও বলেছেন, ‘এটা যেন লাইফ ইনসিওরেন্স কম্পানির এজেন্টদের মতো..লোকে বিমা করাতে চায় না, তাও তাঁরা নাছোরবান্দা, কখন আসব? কখন আসব? তাই এমন একটা সময় দিয়ে দেওয়া যখন এসে আর কাউকে পাওয়া যাবে না। রাহুলজি ঠিক তেমনই টাইম দিয়েছিলেন। কিন্তু তখন যদি কেউ চলে আসে, তো কী করা যাবে?’
দিল্লিতে রাহুল-অভিষেক সাক্ষাত এবং সেই সূত্রে আসন্ন নির্বাচনে রাজ্যস্তরে কংগ্রেস-তৃণমূল সম্ভাব্য আঁতাতের জল্পনা এদিন নস্যাৎ করেছেন অধীর৷ তাঁর মতে, ‘বাংলায় কী হবে, সে সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। তবে এটা বাস্তব, বাংলায় আমরা প্রতিনিয়ত লাঞ্চিত, অত্যাচারিত। প্রত্যহ হিংসার শিকার। কে কার সঙ্গে দেখা করল, কী বলল আমার জানা নেই।’ অধীর জানিয়েছেন, ‘আলোচনা হতেই পারে। আলোচনা করতে কোনও ক্ষতি নেই। রাহুল গান্ধি সর্বভারতীয় নেতা। যে কেউ তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসতে পারেন। তবে আলোচনা করতে আসা মানে এই নয়, যে কাল থেকে বাংলায় সব মিটমাট হয়ে গেল, হাতে হাত ধরে সবাই বেরিয়ে পড়ল। বাংলায় আমরা প্রত্যহ সন্ত্রাসের শিকার, এটা ভুলে গেলে চলবে না।’
এই প্রসঙ্গে অতীতে প্রথমবার দিল্লিতে ইডির (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) জেরা সামলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে এদিন প্রশ্ন তোলেন অধীর। তাঁর মতে, ‘সেবার ইডির অফিস থেকে বেরিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছিলেন। বলেছিলেন, টুইট করে আন্দোলন চলে না। কেন তবে আজ সেই তিনিই ভোররাতে এলেন দেখা করতে রাহুল গান্ধির সঙ্গে? নৈতিকতায় বাধল না? আসলে তখন মোদির কাছে আত্মসমর্পন করে বাঁচতে চেয়েছিলেন এঁরা। এখন বুঝেছেন তাতে লাভ নেই। তাই আবার একূলে ভিড়তে চাইছেন৷ আসলে ‘দিদিমণি’ আর ‘খোকাবাবু’ ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে চাইছেন। দুদিনের অবস্থানের মধ্যে আসমান-জমিনের ফারাক।’