জলপাইগুড়ি: লোকসভা নির্বাচনের (Loksabha Election 2024) প্রচারে ঝড় তুলেছেন অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীর মেজো মামি পুনম চক্রবর্তী এবং মামা রাম চক্রবর্তী। পিছিয়ে নেই অপর দুই মামি পর্ণা নাগ (চক্রবর্তী) এবং কান্তা চক্রবর্তী।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মিমির তিন মামি তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস এবং সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু এবারে ইন্ডিয়া জোট হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্যা এবং গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী কান্তা চক্রবর্তীর পাশাপাশি সিপিএমের প্রার্থী হিসাবে লড়াই করা পর্ণা নাগ (চক্রবর্তী) কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাজিত করার জন্য নির্বাচনি ময়দানে রয়েছেন।
জলপাইগুড়ি-হলদিবাড়ি রোডের ধারে শহরের বিখ্যাত পান্ডাপাড়া কালীবাড়ি। কালীবাড়ির বিপরীত পাশের রাস্তায় মিমির বাড়ি। বিস্ময়কর হল, মিমির বাড়ির রাস্তায় কোনও রাজনৈতিক দলেরই পতাকা বা ফেস্টুন নেই। মিমিদের বাড়ি পেরিয়ে মণ্ডলঘাট যাওয়ার রাস্তার ভিতর পান্ডাপাড়ায় তাঁর তিন মামি এবং মামার বাড়ি। চারটি বাড়িতেই এখন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের আনাগোনা বেড়েছে। ভিতর পান্ডাপাড়ায় অবশ্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ফেস্টুন, পোস্টার যথেষ্ট চোখে পড়েছে।
মঙ্গলবার পড়ন্ত দুপুরে খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যা তথা মিমির মেজো মামি পুনম চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ভিতর পান্ডাপাড়ার দুটি বুথ থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে লিড দেওয়া।’ ভোটের বিষয়ে ভাগ্নি তাঁকে টিপস দিয়েছেন বলেও জানালেন। মিমি ফোনে মেজো মামিকে বলেছেন, সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে জয়ী করতেই হবে। সেইসঙ্গে প্রচারে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, বার্ধক্য ভাতার বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলেছেন। ভাগ্নির টিপস পেয়ে মামিও যথেষ্ট খুশি।
পুনম জানালেন, বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। দলের নেতাদের সঙ্গে গ্রুপ মিটিং করা হচ্ছে। মিমি এবারে প্রার্থী না হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটা পুরোপুরি মিমির ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে মিমি দ্বিতীয়বার সাংসদ হলে বড় খুশি হতাম।’
ভিতর পান্ডাপাড়াতেই মিমির মামা রাম চক্রবর্তী থাকেন। খড়িয়া অঞ্চলের দীর্ঘদিনের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। গ্রামগঞ্জে পরিচিত মুখ রাম। এদিন দুপুরে খড়িয়া গ্রামের ভেতরে তিনি মাদুর পেতে গ্রুপ মিটিং করছিলেন। গ্রুপ মিটিংয়ের শেষে মিমির প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বলেন, ‘ভাগ্নি অনেক আগেই দলনেত্রীকে জানিয়েছিলেন নির্বাচনে লড়াই করবে না। মিমির পেশাগত দিকে অনেক ব্যস্ততা রয়েছে। ওকে তো পেশাগত দিক সামলাতেই হবে। তবে ভাগ্নি তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আজীবন থাকার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
মিমির ছোট মামি পর্ণা নাগ (চক্রবর্তী)। পর্ণা রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তাঁর বাবা পঞ্চা নাগ জলপাইগুড়ির বামপন্থী শিক্ষক আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা ছিলেন। পর্ণা গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী। পর্ণার কথায়, ‘ভাগ্নি মিমির সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক কথা হয় না। পারিবারিক অনুষ্ঠানে দেখা হলে কথা হয়। প্রচারে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। ভোটার স্লিপ দেওয়ার পাশাপাশি স্ক্রুটিনির কাজও করছি। এবারে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের পাশে আছে কংগ্রেস। আমার বড় জা কান্তা চক্রবর্তী কংগ্রেসের নেত্রী। কংগ্রেস এবং সিপিএম যৌথভাবে প্রচার করছে।’
মিমির বড় মামি কান্তা শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও প্রচার থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারেননি। তাঁর কথায়, বিজেপি এবং তৃণমূলকে পরাজিত করতে ইন্ডিয়া জোট ঐক্যবদ্ধ। কান্তার স্বামী সত্যময় চক্রবর্তী খড়িয়া অঞ্চল কংগ্রেসের সভাপতি।
এদিন দুপুরে স্বামী-স্ত্রী মিলে ভোটার তালিকা দেখে এলাকায় কোন ভোটার আছেন তা নির্দিষ্ট করছিলেন। কান্তাকে মিমির বিষয়ে প্রশ্ন করাতে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। শুধু জানিয়েছেন, পারিবারিক অনুষ্ঠানে দেখা হলে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। কান্তা বিকেল হলেই প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন। বাড়ি ফিরছেন রাতে।