প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: বুধবার পার্লামেন্টের এনেক্সি হলে প্রিভিলেজ কমিটির মুখোমুখি হতে চলেছেন কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। সংশ্লিষ্ট বৈঠকে অংশ নিতে সোমবার রাতেই দিল্লি উড়ে এসেছেন অধীর৷ মঙ্গলবার দিল্লিতে সেরেছেন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দিল্লি পৌঁছেই মুর্শিদাবাদের মানুষের সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় সড়ক নির্মাণ মন্ত্রী নিতিন গড়করির সঙ্গে দেখা করেন তিনি। নির্মীয়মাণ বহরমপুর বাইপাসের কাজ পুজোর আগে দ্রুত সম্পন্ন করে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য একটা অংশ খুলে দেওয়ার দাবি জানান অধীর। একইসঙ্গে ভাবতায় রেললাইনের উপর অসম্পূর্ণ ব্রীজের কাজটিও দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য আর্জি জানান কংগ্রেস নেতা। যদিও বুধবারে প্রিভিলেজ কমিটির বৈঠকে কোন সুরে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করেন, সেদিকে নজর রাখছে বিরোধী রাজনৈতিক মহল।
বিগত বাদল অধিবেশনের শেষলগ্নে মণিপুরের ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘অন্ধ রাজা’ এবং ‘নীরব মোদি’ বলে লোকসভায় বেনজির কটাক্ষ করেছিলেন অধীর। এরপর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ এবং মন্ত্রীদের বিরক্ত করার অভিযোগে লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে সংসদ থেকে সাসপেন্ড করা হয়। এই প্রথম লোকসভায় কোনও বিরোধী দলনেতাকে সাসপেন্ড করা হল। অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগও আনা হয়। সেই সূত্রে গত ১৮ অগাস্ট প্রবীন বিজেপি সাংসদ সুশীল কুমার সিংয়ের নেতৃত্বাধীন লোকসভার প্রিভিলেজ কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত হয় অধীর চৌধুরীর সাসপেনশন ইস্যু। বহরমপুর সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে এভাবে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করায় প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রতিনিধিরা। এই সূত্রে বুধবার ৩০ অগাস্ট সাসপেনশন নিয়ে নিজের বক্তব্য রাখার জন্য প্রিভিলেজ কমিটিতে তলব করা হয়েছে অধীরকে।
তবে ১৮ অগাস্ট অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা চিফ হুইপ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিমত ব্যক্ত করেন, অধীরকে ইতিমধ্যেই বাদল অধিবেশনের বাকি সময়ের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁকে আবার শাস্তি দেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই। এক্ষেত্রে শাসক দলীয় প্রতিনিধিদের তরফে সংসদীয় নীতি অনুসরণ করে অধীরকে তলব করার প্রস্তাব রাখা হয়, যাতে সম্মতি দেন কমিটির চেয়ারপার্সন সুশীল কুমার সিং। এও জানা গিয়েছে, আগামীকাল অধীরের বক্তব্য শোনার পরই অধ্যক্ষ ওম বিড়লার কাছে সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবি জানাতে পারে লোকসভার প্রিভিলেজ কমিটি।
এই প্রসঙ্গে অধীর অবশ্য আগেই জানিয়েছেন, কমিটি ডেকে পাঠালে সংসদীয় রীতিনীতি মেনে অবশ্যই সাড়া দেবেন তিনি। তিনি নিজে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটির (পিএসি) সভাপতি। তাই এর গুরুত্ব যথেষ্ট ভালো বোঝেন। কিন্তু অধীর জানিয়েছেন লোকসভায় যা বলেছেন, সে অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র সরবেন না। তিনি বলেন, ‘সংসদীয় বৈঠকে তলব করা নিয়ে কিছুই ভাবছি না। আমি কোনও মিথ্যে কথা বলেছি নাকি, যে ভয় পাব? যা বলেছি তা বিন্দুমাত্র অসংসদীয় নয়। কোনও অমর্যাদাকর বা অসম্মানজনক মন্তব্য করা আমি পছন্দ করি না। সেদিনও করিনি। তবু আমায় বহিষ্কার করা হল। বুধবার এ নিয়ে যা বলার কমিটিতে বলব।’ অধীরের দাবি, ‘যে কোনও চ্যালেঞ্জ নিতে আমি সবসময়ই প্রস্তুত। আগামীকালের কমিটি বৈঠক নিয়ে কোনও বাড়তি প্রস্তুতি নেই৷ যা বলেছি রেকর্ডে সবই আছে। তাঁরাই বিচার করুন।’ আগামীকাল সেই প্রিভিলেজ কমিটির বহুচর্চিত বৈঠক। সেখানে সশরীরে হাজির হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করার ডাক পেয়ে দিল্লি হাজির হয়েছেন বর্ষীয়ান সাংসদ। আগামীকাল তাঁর দিকেই নজর রাখবে শাসক-বিরোধী উভয় শিবিরই।