বালুরঘাট: এ এক ভিন্য ধরনের একলব্যের লড়াই। বালুরঘাটের আদিবাসী কন্যা আনিশার স্বপ্ন জাতীয় হকিদলে খেলা। স্বপ্নের বীজ পুঁতেছিলেন স্কুল শিক্ষিকা নিভা মণ্ডল। অথচ কীভাবে হকি খেলতে সে ব্যাপারে দিশা দেখানোর দ্রোণাচার্য নেই। তা সত্ত্বেও প্রতিদিন হকিস্টিক ও বল নিয়ে দু’বেলা অনুশীলন করতে ভোলেন না আনিশা হরো। নিয়ম করে চলে যান বাড়ির পাশের ছোট্ট মাঠে।
নদীপার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণিতে পাঠরতা এই হকি খেলোয়াড়ের বাড়ি বালুরঘাট ব্লকের চকভৃগু গ্রাম পঞ্চায়েতের কুয়ারন গ্রামে। প্রতিদিন পাঁচ কিমি সাইকেল চালিয়ে তিনি স্কুলে যান। দুঃস্থ ও সুযোগ সুবিধাহীন আদিবাসী সমাজে বাস তার। কোনও প্রশিক্ষক ছাড়াই চলে তার হাড়ভাঙা পরিশ্রম। স্কুল থেকে একাধিক রাজ্যস্তরের খেলায় তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। তবে যে শিক্ষিকা হকির প্রশিক্ষণ করাতেন তিনি অবসর নেওয়ার পরেই সমস্যা শুরু হয়।
২০১৮ সালে কলকাতা, কল্যাণীতে গিয়েছিলেন আনিশা। সেখানে হকি খেলে তার স্বপ্ন আরও দৃঢ় হয়। ভাবতে থাকে কোনও একদিন তিনি নিশ্চয়ই দেশের হয়ে হকি খেলবেন। কিন্তু এখন আর খেলার শিক্ষিকারা সেই দায়িত্ব নিতে চান না। অথচ খেলাধুলা করে আনিশা জেলাস্তরে একাধিক পদক পেয়েছেন। কিন্তু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। কোথায় গেলে তিনি প্রশিক্ষণ পাবেন? বা কে প্রশিক্ষণ দেবেন? তাও জানা নেই তার। তবু প্রত্যন্ত একটি গ্রামে তার স্বপ্ন সাধনা চলছে নিরলস।
একটি ভাঙাচোরা ছোট্ট ঘরে আনিশা, তার দিদি ও মা থাকে। তার মা সুনিতা হরো জানান, দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচের সঙ্গে মেয়ের স্বপ্নপূরণ করতে এখানে দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না তার বাবা জুয়েল হরোর। এরপর তিনি ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে যেতে বাধ্য হন। মেয়ে যেন খেলায় এগিয়ে যেতে পারে এটাই চাই।’ আনিশা বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণি থেকে হকি খেলছি। আমার প্রশিক্ষণ চাই। সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা না পেলে আমার এই স্বপ্নপূরণ হবে না।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কুহেলি মণ্ডল বলেন, ‘আনিশা খেলাধুলায় প্রতিভাধর। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার নিয়ে আসে। স্কুলের তরফে কলকাতা থেকে একজন প্রশিক্ষক নিয়ে এসেছিলাম। তিনি সমস্তটা দেখেছেন। সঠিক প্রশিক্ষণ পেলে সে অনেক উন্নতি করবে।’