পলাশবাড়ি: মঙ্গলবার সকালে জমিতে এসে এক চাষি নিরঞ্জন সরকার দেখলেন, পাশের বেগুনখেতে একটি পাখির দেহ পড়ে রয়েছে। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন আরেকটি পাখির দেহ ঝুলছে বিদ্যুৎবাহী তারে। নিরঞ্জন সহ আশপাশের চাষিরা এমনই দৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন গত এক মাস ধরে। তাঁদের হিসেব অনুযায়ী, গত এক মাসে প্রায় ২০টি পাখির মৃত্যু হয়েছে। আলিপুরদুয়ার-১ (Alipurduar) ব্লকের পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পারপাতলাখাওয়া গ্রামে ঘটছে এই ঘটনা। সেখান থেকে জলদাপাড়া বনাঞ্চলের দূরত্ব প্রায় আড়াই-তিন কিমি। চাষিদের দাবি, বিদ্যুৎবাহী তারে শক খেয়েই পাখির মৃত্যু (Birds death) ঘটছে। পরিবেশপ্রেমীরা বিদ্যুৎবাহী তারে পাখিমৃত্যুর কারণটি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। পাশাপাশি তাঁদের মত, চাষের জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করার ফলেও পাখির মৃত্যু ঘটতে পারে।
পারপাতলাখাওয়া গ্রাম মূলত কৃষি অধ্যুষিত। এর উত্তর-দক্ষিণ বরাবর চলে গিয়েছে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎবাহী লাইন। আবার পূর্ব-পশ্চিম বরাবর রয়েছে হাইটেনশন লাইন। এই লাইনের নীচে যেখানে ১১ হাজার ভোল্টের লাইন গিয়েছে, সেখানেই পাখিমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এদিন কার্তিক সরকারের জমিতে পড়ে থাকা মাছরাঙ্গা পাখির পা দুটি প্রায় পুড়ে যায়। কার্তিকের দাবি, কীটনাশক খেয়ে নয়, বিদ্যুতের শক খেয়েই পাখির মৃত্যু হয়েছে।
বিষয়টি শোনার পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ন্যাফ-এর (NAF) কোঅর্ডিনেটর অনিমেষ বসু। তাঁর কথায়, ‘আগেও বেশ কিছু জায়গায় এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে বিদ্যুৎবাহী তারের কারণেই যদি পাখিমৃত্যুর ঘটনা ঘটে, তাহলে নির্দিষ্ট ওই জায়গায় কেচিং লাগিয়ে সুরক্ষার জন্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে উদ্যোগী হতে হবে।’ তিনি আরও জানান, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বহু সংখ্যক পাখি আশপাশের গ্রামগুলিতে খাবারের খেঁাজে চলে আসে। এমনভাবে পাখিমৃত্যুর ঘটনা ঘটতে থাকলে তা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। তবে বিদ্যুতের তারের কারণেই নাকি কৃষিজমিতে পেস্টিসাইড ব্যবহারের ফলে পাখির মৃত্যু ঘটছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। আলিপুরদুয়ার-১ পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ চক্রধর রায় অধিকারীর কথায়, ‘বিদ্যুৎবাহী তারের কারণেই যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে দপ্তরকে জানিয়ে সেখানে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।’ বন দপ্তরের সঙ্গেও তিনি কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। একই পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ ভোলানাথ রায় পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।