অভিজিৎ ঘোষ, আলিপুরদুয়ার: মৃত্যুর পর নাকি শান্তি! তবে এই কথাটা আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের (Alipurduar District Hospital) ক্ষেত্রে খাটে না। কারণ জেলা হাসপাতালের মর্গে কোনও দেহ ময়নাতদন্তের জন্য গেলেই শুরু হয়ে যায় টাকার খেলা।
অভিযোগ, সেখানে দাপট দেখা যায় সাফাইকর্মীদের। তাঁদের টাকা না দিলে ময়নাতদন্ত করানোটা কার্যত অসম্ভব। সরকারি হাসপাতালে (Hospital) এই ‘সিস্টেম’ চলে আসছে বহুদিন ধরে। টাকা না দিলে কাজ হবে না, প্রকাশ্যেই এমন হুমকি শুনতে হয়। অভিযোগ পরিজনদের। জেলা হাসপাতালের সুপার পরিতোষ মণ্ডলের অবশ্য দাবি, ‘এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ জানায়নি। তবুও খতিয়ে দেখা হবে।’
জেলা হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত করার কথা চিকিৎসকদের। জেলা হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকের সেখানে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ডিউটি পড়ে। তবে সেখানকার ‘নিয়ন্ত্রণ’ থাকে কার্যত সাফাইকর্মীদের হাতেই। হাসপাতাল থেকেই সহায়তার দায়িত্ব দেওয়া হয় একজন সাফাইকর্মীকে। যদিও পরিজনরা বলছেন, আরও দুজন সাফাইকর্মী থাকেন সেখানে। চিকিৎসক ময়নাতদন্ত করতে আসার আগে তাঁরাই মৃতের পরিজনদের সঙ্গে ‘ডিল’ সেরে ফেলেন।
অ্যাম্বুল্যান্সে (Ambulance) করে দেহগুলো আনা হয় জেলা হাসপাতালে মর্গের সামনে। প্রতিদিন দুপুর ৩টা থেকে ময়নাতদন্ত শুরু হয়। তার আগে, দুপুর ২টা থেকেই শুরু হয় ওই টাকার কথাবার্তা। অ্যাম্বুল্যান্স থেকে দেহ নামানোর আগে সাফাইকর্মীরা মৃতের পরিবারের কাছে টাকা দাবি করতে শুরু করে দেন। কখনও অ্যাম্বুল্যান্স থেকে দেহ নামানো-ওঠানোর জন্য ২০০ টাকা আলাদা করে চাওয়া হয়। দেহ যে প্লাস্টিকে মুড়িয়ে দেওয়া হয়, সেটা কিনে দেওয়ার জন্য নেওয়া হয় ৩০০ টাকা। কখনও আবার ওগুলো সহ দেহ ঠিক করে সেলাই ও প্যাকিং করে দেওয়ার জন্য এক সঙ্গে টাকা চাওয়া হয়। এই টাকা চাওয়ার কোনও হিসেব নেই। শোকার্ত পরিবারের ‘পকেট বুঝে’ টাকা দাবি করেন সাফাইকর্মীরা। সেটা ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়।
এক মৃতের বাড়ির লোকজন বলছিলেন, ‘এটা তো আপনাদের কাজ। সরকারি নিয়মে তো বিনামূল্যেই পরিষেবা দিতে হয়।’ সাফাইকর্মী সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, ‘তাহলে ময়নাতদন্তর পর দেহ ঠিক করে সেলাই করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের থাকবে না। ভিতরের কোনও অংশ দেখা যেতে পারে, খুলে পড়ে যেতে পারে। তখন আমাদের বলতে পারবেন না। ওই ভাবেই নিয়ে যেতে হবে।’ এইরকম কথা শোনার পর কোন পরিবারই বা আর টাকা নিয়ে তর্ক করার সাহস পাবে? সেই বাড়ির লোকজনও সাফাইকর্মীদের দাবি মতোই টাকা দিতে রাজি হয়ে গেলেন।