শান্ত বর্মন, জটেশ্বর: লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) জেলার আইকন আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকা ধনীরামপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের নরসিংহপুর কালীবাড়ি এলাকার বিশেষভাবে সক্ষম গৃহবধূ লিলি বর্মন৷ গোটা দেশ বা রাজ্যে বিশেষভাবে সক্ষমরাও যে ভোটদানে পিছিয়ে থাকবেন না, বা দেশ গড়তে তাঁদের একটি ভোটও মূল্যবান সেই প্রচারটি লিলির মাধ্যমে গোটা জেলায় তুলে ধরবে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন। বুধবার একটি কর্মসূচির মধ্য দিয়ে লিলির হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের জেলা শাসক আর বিমলা। এই খবর চাউর হতেই খুশির হাওয়া গোটা ফালাকাটায়।
আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রায় আট হাজার বিশেষভাবে সক্ষম ভোটার রয়েছেন। প্রশাসনিক সচেতনতার পরেও অনেক সময় তাঁরা বিভিন্ন আধিকারিকদের কথা বুঝতে পারেন না। একইভাবে, তাঁদের মতামত বুঝতেও আধিকারিকদের সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে লিলি সহযোগিতা করতে পারবেন। পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিশেষভাবে সক্ষমদের যখন পোস্টাল ভোট গ্রহণ করা হবে সেখানে কোনওরকম সমস্যা তৈরি হলে তা ভোটার ও আধিকারিকদের বোঝাতে পারবেন লিলি। বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ যে বর্তমান সময়ে আর পিছিয়ে নেই সেই বার্তা দিতেও জেলা প্রশাসন এই উদ্যোগ নিয়েছে।
দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে জন্ম লিলির। জন্মের দু’বছর পর্যন্ত লিলি কথা বলতে পারতেন না দেখেও হাল ছাড়েননি তাঁর বাবা সুশীল বর্মন। মেয়েকে খগেনহাটের সমাজসেবী লক্ষ্মীকান্ত রায়ের সংগঠনে ভর্তি করান। সেখানে বিশেষভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের ব্যবস্থা রয়েছে। পরে বেগম রাবেয়া খাতুন উচ্চবিদ্যালয় থেকে লিলি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। লক্ষ্মীকান্তর সহযোগিতায় ডেফ অ্যাথলিট মিটে ভারতের হয়ে তিনবার সোনা জয় করেন তিনি।
লিলির বাবা সুশীলকুমার বর্মন বলেন, ‘জন্মের পর চিকিৎসক বলে দিয়েছিলেন লিলি কথা বলতে পারবে না। সেই থেকে ওকে খগেনহাট ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনে ভর্তি করিয়ে দিই। বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ায় স্কুলেও বিদ্রুপের শিকার হতে হয় লিলিকে। সে-ই এখন জেলার আইকন। এজন্য আমার গর্ব হচ্ছে। স্ত্রী ও ছেলে জীবিত থাকলে তারাও খুশি হত।’ লিলির স্বামী গৌরাঙ্গ রায় বলেন, ‘একজন বিশেষভাবে সক্ষম মেয়েকে বিয়ে করায় অনেকেই আমাকে বাধা দিয়েছিলেন। তবে আমি জানি লিলি একদিন সবার মুখ উজ্জ্বল করবে। ওর সাফল্যে আমি খুবই খুশি। আমি সবসময় তার পাশে আছি।’ লক্ষ্মীকান্ত জানান, লিলি এবারের নির্বাচনি আইকন হিসাবে নির্বাচিত হওয়ায় তাঁরা গর্বিত।
অন্যদিকে, জেলা শাসক আর বিমলা বলেন, ‘জেলাজুড়ে লিলিকে আমরা আইকন করেছি। বিশেষভাবে সক্ষমরাও যে পিছিয়ে নেই সেটা মানুষ লিলিকে দেখেই জানতে পারবেন। নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মসূচিতে লিলি থাকবেন।’