সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি: ধূপগুড়ি (Dhupguri) পুরসভার মাথাব্যথার কারণ শহরের ক্রমবর্ধমান আবর্জনা। সমস্যা সমাধানে শেষপর্যন্ত সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঝাড় আলতাগ্রাম ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে চুক্তিও করেছে পুরসভা (Dhupguri Municipality)। সম্প্রতি পুর প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন ওই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। আগের দু’বারের ‘তিক্ত অভিজ্ঞতা’ মাথায় রেখে এবার প্রচার চাননি পুরকর্তারা। তবে কবে থেকে সেই প্ল্যান্টে শহরের আবর্জনা ফেলা যাবে তা এখনও অনিশ্চিত বলে জানান চেয়ারপার্সন ভারতী বর্মন। তাঁর কথায়, ‘কাজ শুরু নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে, নিশ্চিত করে বলা যাবে না কবে নাগাদ প্ল্যান্ট ব্যবহার করতে পারব। গ্রাম পঞ্চায়েতের মতো আমাদেরও যৌথভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোতে হবে।’
ধূপগুড়ি থেকে দশ কিলোমিটার দূরে পূর্ব ডাউকিমারিতে এক বিঘার কিছু বেশি জমিতে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্টটি তৈরি করা হবে। সেখানে ধূপগুড়ি শহরের আবর্জনা প্রসেস হবে। তবে মাত্র এক বিঘা জমিতে তৈরি প্ল্যান্টে গোটা পঞ্চায়েত ও ধূপগুড়ি শহরের দৈনিক আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ কত দূর কাজ দেবে তা নিয়ে ইতিমধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। শহরের সর্বশেষ পুরবোর্ডের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপির ধূপগুড়ি টাউন মণ্ডল সভাপতি কৃষ্ণদেব রায় বলেন, ‘শহর আবর্জনা থেকে মুক্তি চায়। তবে অতীতে প্ল্যান্টের জন্য দুটি জমি হাতে পেয়েও কাজের কাজ কিছুই করা যায়নি। এখন এক বিঘা জমিতে গোটা শহরের আবর্জনা কীভাবে সামাল দেবে জানি না। শেষপর্যন্ত এবারও অশ্বডিম্ব না হলেই ভালো।’
উল্লেখ্য, দুই দশকের পুর শাসনে দু’বার শহরের আবর্জনা সমস্যা সমাধানে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট গড়ার কাজ অনেকটা এগিয়েও শেষপর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৭ সালে বাম পুরবোর্ডের আমলে ধূপগুড়ি রেলস্টেশন লাগোয়া ১৬ বিঘার একটি পুকুর সহ মোট সাত একর জায়গা কিনে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের পরিকাঠামো তৈরি হয়। শেষপর্যন্ত সেটিও চালু হয়নি। এসম্পর্কে তৎকালীন চেয়ারম্যান সত্যরঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘আজ যাঁরা পুরসভা সামলাচ্ছেন সেদিন তাঁরাই ভুল বুঝিয়ে মানুষকে উসকে প্রকল্পটি চালু করতে দেননি। সেদিনের সিদ্ধান্তের আজ খেসারত দিতে হচ্ছে। ওইদিন যাঁরা বাধা দিয়েছিলেন আজ তাঁরাই পুরসভার চেয়ারে। এখন নিশ্চয় সেদিনের ভুল বুঝতে পারছেন।’
২০১২ সালে ধূপগুড়ি পুরবোর্ড দখল করে তৃণমূল। তখন থেকে টানা এক দশকের চেষ্টায় ২০২২ সালের ২৭ জুলাই বানারহাট ব্লকের রেডব্যাংক মৌজায় পুরসভাকে প্ল্যান্ট গড়তে পাঁচ একর জমি দেওয়া হয়। তবে কিছুদিনের মধ্যেই সেই জমিতে চা বাগান বানিয়ে ফেলেন নতুন লিজ নেওয়া মালিক। পুরসভা সূত্রে খবর, ওখানে প্ল্যান্ট গড়তে জেলা ও পুর প্রশাসন চেষ্টা চালালেও শেষপর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। অবশেষে, যেভাবে মালবাজার পুরসভার জন্যে ওদলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের চেল নদীর কাছে শান্তি কলোনি কিংবা ময়নাগুড়ি পুরসভার জন্যে খাগড়াবাড়ি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় যৌথ প্ল্যান্ট গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেভাবেই ধূপগুড়ির আবর্জনা সমস্যা মেটাতে ঝাড় আলতাগ্রাম-১ গ্রাম পঞ্চায়েতই এখন প্রশাসনের ভরসা। এব্যাপারে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সরস্বতী রায় বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে প্ল্যান্ট গড়া হচ্ছে। আশপাশে জনবস্তি থাকলেও অত্যাধুনিক বিজ্ঞানসম্মত প্ল্যান্টে সমস্যা হবে না।’