আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ার যেন হয়ে উঠেছে উত্তর-পূর্বে মাদক পাচারের ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার। ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য একদিকে বাংলাদেশে মাদক পাচার করা সহজ। অন্যদিকে, আবার সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে। সেজন্য অসম কিংবা কোচবিহার থেকে মাদক এনে আলিপুরদুয়ারে হাতবদল করছে পাচারকারীরা। পুলিশি তৎপরতায় অবশ্য বেশ কয়েকবার পাচার রোখা গিয়েছে। কিন্তু ভোটের আগে বিপুল পরিমাণ মাদক বাজেয়াপ্ত হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
যেমন, ২৪ ফেব্রুয়ারি নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশন এলাকায় ইয়াবা ট্যাবলেট হাতবদল করার সময় ধরা পড়ে চারজন। পরিবার সেজে এসেছিল পাচারকারীরা। অসম থেকে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার ইয়াবা কোচবিহারে পাচারের ছক ছিল। পুণ্ডিবাড়ি থেকে এসে ফালাকাটায় দুলাল দোকান এলাকাতে মাদক পাচারের ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল পাচারকারীরা। কলকাতা এসটিএফ ও ফালাকাটা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১ মার্চ গ্রেপ্তার করে পাঁচজনকে। সেইসঙ্গে বাজেয়াপ্ত হয় প্রায় আড়াই কোটি টাকা বাজারমূল্যের ব্রাউন সুগার। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই চলতি মাসের ৩ তারিখ অসম-বাংলা সীমানায় পাকড়িগুড়িতে প্রায় সাত কেজি আফিম বাজেয়াপ্ত করা হয়। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, এই আফিম গুয়াহাটি থেকে আলিপুরদুয়ার হয়ে জয়পুরে যাওয়ার কথা ছিল। পরপর মাদক বাজেয়াপ্ত করায় পুলিশ সাফল্য পেলেও চিন্তা থাকছেই। আলিপুরদুয়ার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও বলেন, ‘পুলিশ বিভিন্ন মাদক বিরোধী প্রচার অভিযান কর্মসূচি নিচ্ছে। তার সঙ্গে মাদক বাজেয়াপ্ত করার কাজ চলছে।’
এত বিপুল পরিমাণ মাদক আলিপুরদুয়ারে পৌঁছাচ্ছে কী করে? আলিপুরদুয়ার জেলার ভৌগোলিক অবস্থান পাচারকারীদের কাজ সহজ করে দিয়েছে। জেলার উত্তরে রয়েছে ইন্দো-ভুটান সীমান্ত, দক্ষিণে কোচবিহার। পূর্বদিকে আবার রয়েছে অসম-বাংলা সীমানা, পশ্চিমদিকে জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি। এজন্য প্রায় সব এলাকা থেকে মাদক কেনাবেচা করার কাজে সুবিধা হয়। আলিপুরদুয়ার থেকে কোচবিহার হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছানো যায়। আর অসম-বাংলা সীমানা দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য সহ অন্যান্য জায়গায় মাদক পাচারের সুবিধা রয়েছে। যাতায়াতের জন্য পাচারকারীদের ‘ভরসা’ ৩১ সি জাতীয় সড়ক বা রেল রুট। ফলে মাদক কারবারিদের কাছে মাদক হাতবদলের জায়গা হয়ে উঠেছে আলিপুরদুয়ার।
ভোটের আগে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করে বিভিন্ন এলাকায় অশান্ত পরিবেশ তৈরি করাই কি উদ্দেশ্য? প্রশ্ন উঠছে। পুলিশ যদিও মাদক বাজেয়াপ্ত করার ঘটনাকে ভোটের সঙ্গে যুক্ত করতে নারাজ। গত কয়েক বছরে রেকর্ড পরিমাণ মাদক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আর প্রতিবছর পুলিশের সাফল্যের সংখ্যা বাড়ছে বলে পুলিশের দাবি।