মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, বীরপাড়া: জেলার বিভিন্ন শহরে চুটিয়ে কারবার করা নার্সিংহোম ও প্যাথলজিকাল ল্যাবগুলির একাংশের পরিকাঠামো, পরিষেবা বাবদ বিল থেকে শুরু করে নানা অভিযোগ দীর্ঘদিনের। একই রোগীর রক্ত একাধিক ল্যাবে পরীক্ষা করে ভিন্ন ভিন্ন রিপোর্ট পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি, আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) শহরের একটি প্যাথলজিকাল ল্যাবে (Pathological laboratory) পরিষেবা নিতে আসা রোগী ও পরিজনদের শৌচালয় ব্যবহার করার বিনিময়ে মাথাপিছু ৫ টাকা করে আদায়ের অভিযোগও উঠেছিল কিছুদিন আগে। এনিয়ে জেলাজুড়ে অভিযান শুরু করল ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর।
বৃহস্পতিবার ফালাকাটা (Falakata) ও বীরপাড়ায় (Birpara) অভিযান চালান দপ্তরের আলিপুরদুয়ারের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সৌরভ গুহ রায়, রিজিওনাল কনজিউমার ওয়েলফেয়ার অফিসার চন্দন সাহা, ক্রেতা সুরক্ষা কাউন্সিলের সদস্য সন্দীপ ভার্মা ও উত্তমকুমার কুণ্ডু প্রমুখ। এদিন ফালাকাটার দুটি ও বীরপাড়ার দুটি নার্সিংহোম (Nursinghome) এবং মোট সাতটি প্যাথলজিকাল ল্যাবের কাগজপত্র ও টেকনিশিয়ানদের শংসাপত্র খতিয়ে দেখার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিধি জারি করেন তাঁরা। আধিকারিকদের কথায়, এদিন বিশেষ কোনও গরমিল না পেলেও ফালাকাটার একটি ল্যাবের ছাড়পত্রের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নজরে এসেছে। অবশ্য ওই ল্যাব কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই ছাড়পত্রের পুনর্নবীকরণের আবেদনও জানিয়েছে।
রক্ত, মল, মূত্র সহ নানা পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্যাথলজিকাল ল্যাবগুলির একটির সঙ্গে আরেকটির দরের ফারাক দেখা যায় প্রায়ই। তাই ল্যাব কর্তৃপক্ষগুলিকে বিভিন্ন পরীক্ষার রেট চার্ট টাঙানোর নির্দেশ দিয়েছে ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর। পাশাপাশি রোগীর পরিচয়পত্রের কপি সংগ্রহ করে রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসাধীন রোগীকে একই বোতলে দীর্ঘদিন জল সরবরাহ করা যাবে না জানিয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষগুলিকে বাধ্যতামূলকভাবে ডিসপোজেবল বোতল কিংবা গ্লাস ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি, শৌচাগার, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও খতিয়ে দেখা হয়।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে খবর, গত বছরের ৭ নভেম্বর আয়োজিত জেলা ক্রেতা সুরক্ষা কাউন্সিলের বৈঠকে জেলার বিভিন্ন প্যাথলজিকাল ল্যাব, নার্সিংহোম ও চিকিৎসকদের চেম্বারগুলির পরিকাঠামো নিয়ে একাধিক অভিযোগ আলোচিত হয়। কাউন্সিলের সেক্রেটারি তথা জেলা শাসক আর বিমলা বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া অভিযোগের সারবত্তা ও কাগজপত্র খতিয়ে দেখতে বলেন ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরকে। ১৮ ডিসেম্বর আলিপুরদুয়ার শহরের তিনটি নার্সিংহোম ও ১১টি প্যাথলজিকাল ল্যাবে অভিযান চলে।
এদিকে জেলা সদর সহ আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসকদের চেম্বারগুলির পরিকাঠামো নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। মূলত ওষুধের দোকানকে কেন্দ্র করেই এধরনের চেম্বারগুলি চলে। এগুলির একটা বড় অংশেই পর্যাপ্ত সংখ্যক রোগী বসার ব্যবস্থা নেই। তবু নিরুপায় রোগীদের ভিড় উপচে পড়ে এধরনের চেম্বারে। অনেক চেম্বারে জায়গার অভাবে রোগীদের রাস্তায় কিংবা ফুটপাথে বসেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডাক্তারের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সৌরভ গুহ রায় বলেন, ‘পরবর্তী ধাপে ডাক্তারদের চেম্বারগুলির পরিকাঠামো দেখতে অভিযানের প্রস্তুতি চলছে।’