ভাস্কর শর্মা, আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ারে (Alipurduar) ভোট শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভোটের গেরো এখনও কাটেনি। একদিকে যেমন আলিপুরদুয়ার কলেজের স্ট্রংরুমে বাক্সবন্দি রয়েছে প্রার্থীদের ভাগ্য, তেমনই নির্বাচনি আচরণবিধির কারণে আলিপুরদুয়ার জেলাজুড়ে বহু কাজ আটকে রয়েছে। রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, সেতু নির্মাণ সহ যাবতীয় সরকারি উন্নয়নমূলক কাজ থমকে।
এই কাজগুলি করার জন্য বিভিন্ন দপ্তর টেন্ডার ডাকে। কিন্তু ভোট ঘোষণার আগে টেন্ডার দিলেও প্রশাসন ওয়ার্ক অর্ডার দিতে পারেনি। ফলে ভোটপর্ব না মেটা পর্যন্ত সমস্ত কাজ বন্ধ থাকবে। গত ১৯ তারিখ আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শেষ হয়ে গেলে কী হবে, গোটা দেশে ভোটের যাবতীয় কর্মকাণ্ড শেষ হতে এখনও এক মাসেরও বেশি সময় বাকি। ভোট না মিটলে আচরণবিধিও কাটবে না। আর ততদিন জেলার গ্রামীণ ও পুর এলাকার উন্নয়ন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের পানীয় জল, রাস্তা, ড্রেন, সিসি রোড নির্মাণ সহ প্রায় পাঁচ থেকে সাত কোটি টাকার কাজ ভোটের গেরোয় পড়ে আটকে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি কাজ আটকে গিয়েছে ফালাকাটা পুরসভার। নানা উন্নয়নমূলক কাজের জন্য এই পুরসভা সম্প্রতি প্রায় ১৫ কোটি টাকা পেয়েছে। এই টাকায় প্রায় ৪২টি ড্রেন, বড় কালভার্ট, একাধিক রাস্তার কাজ হওয়ার কথা। এছাড়াও প্রায় দেড় কোটি টাকায় গ্রিন সিটি মিশন প্রকল্পে আলোর ব্যবস্থা, এসডব্লিউএমএম প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু ওয়ার্ক অর্ডার না হওয়ায় সমস্ত কাজ আটকে গিয়েছে।
গোটা বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি স্নিগ্ধা শৈবকে এবং তৃণমূল নেতা গঙ্গাপ্রসাদ শর্মাকে ফোন করা হলেও তঁরা কেউই ফোন তোলেননি। এদিকে ফালাকাটা পুরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ মুহুরির কথায়, ‘আমরা অর্থ মঞ্জুরের চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করি। ভোট ঘোষণার আগেই আমরা প্রায় ১৫ কোটি টাকার টেন্ডার ডাকি। কিন্তু টেন্ডার খোলা এবং ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় দরকার হয়। ভোট ঘোষণা হওয়ায় সেই সময়টুকু আমরা আর পাইনি। ভোটপর্ব মিটে গেলেই কাজগুলি শুরু করা হবে।’
ফালাকাটা পুরসভার পাশাপাশি আলিপুরদুয়ার পুরসভারও বেশ কয়েকটি কাজ থমকে গিয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, ভোট ঘোষণা হওয়ার আগে তারাও প্রায় দেড় কোটি টাকার টেন্ডার দিয়েছে। ওই টাকায় শহরের সাত থেকে আটটি ওয়ার্ডের রাস্তার কাজ হবার কথা ছিল। কিন্তু ভোট ঘোষণা হওয়ায় ওই কাজগুলিও আটকে গিয়েছে।
তবে আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, এবার তারা নিজেদের বাজেটই তৈরি করতে পারেনি। এতদিন মার্চ মাসের মধ্যেই জেলা পরিষদ খসড়া বাজেট তৈরি করে রাজ্যে পাঠাত। কিন্তু মার্চ মাস শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভোটের দিনক্ষণও ঘোষণা হয়ে যায়। এই আবহে নতুন কোনও পরিকল্পনা রাজ্য স্তরে পাঠানো সম্ভব হবে না। এদিকে নতুন জেলা পরিষদের বোর্ড গঠনের ছয় মাস হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত স্থায়ী কমিটির একটিও বৈঠক হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে। এই অবস্থায় গ্রামীণ এলাকাগুলির উন্নয়নমূলক কাজ কীভাবে হবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
জেলা পরিষদের এক সদস্যের বক্তব্য, ‘এলাকার কী কী উন্নয়ন হবে তার তালিকা ও আনুমানিক খরচের একটি বাজেট করে রাজ্যে পাঠাতে হয়। সেই ভিত্তিতেই অর্থবরাদ্দ হয়। কিন্তু এবার সেসব কিছুই করা হয়নি। এর মধ্যেই ভোট ঘোষণা হয়ে গেল। তাই আগামী মাসগুলিতে কীভাবে কাজ হবে তা আমরাও বুঝতে পারছি না।’