ভাস্কর শর্মা, ফালাকাটা : ছোট একটি ঘর। তার মধ্যেই গাদাগাদি করে বসে অফিস করছেন ফালাকাটা পুরসভার কর্মীরা। মানুষকে পরিষেবা দিতে গিয়েও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা। এই অবস্থায় শহরে জেলা পরিষদের যে ডাকবাংলো রয়েছে সেখানেই অস্থায়ীভাবে অফিস চালাবার অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ মুহুরি। কিন্তু সেই আবেদনকে পাত্তাই দিল না জেলা পরিষদ। পুরসভাকে অফিস চালাবার অনুমতি না দিয়ে, সেই ডাকবাংলো একজনকে লিজ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে কোনও কাউন্সিলার এবং চেয়ারম্যান নিজে বৃহস্পতিবার পুরসভার অফিসে যাননি।
চেয়ারম্যান যে চিঠি দিয়েছিলেন, আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের বিদায়ি বোর্ড ওই চিঠির প্রাপ্তিস্বীকারও করেছিল বলে দাবি। এমনকি মৌখিকভাবে নাকি ডাকবাংলো পুরসভাকেই দেওয়া হবে বলে জানানোও হয়েছিল তখন। কিন্তু তারপর কেন এভাবে পুরসভাকে কিছু না জানিয়েই লিজ দিয়ে দেওয়া হল, সেকথা কেউ বলতে পারছে না। জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত সভাধিপতি স্নিগ্ধা শৈব বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনও আমাদের স্থায়ী সমিতি গঠন হয়নি। সব কিছু হয়ে যাওয়ার পর আমরা অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
এই খবর জানাজানি হতেই ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয় ফালাকাটায়। জেলা পরিষদের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ শাসকদলের নেতারাও। ফালাকাটা পুরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ মুহুরি বলেন, ‘গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিসের একটি ছোট ঘরে আমাদের পুরসভার কাজকর্ম চালাতে হচ্ছে। তাই আমরা জেলা পরিষদকে ওই অনুরোধ করেছিলাম। তারা আমাদের মৌখিক আশ্বাসও দিয়েছিল। কিন্তু এদিন শুনি, তারা ওই ডাকবাংলো একজন ব্যক্তিকে লিজে দিয়ে দিয়েছে।’ চেয়ারম্যানের মতে, ‘এটা একেবারেই ঠিক হয়নি। আমাদের অন্তত জানানো উচিত ছিল।’ আপাতত তাঁরা দলের উঁচুতলার নেতাদের জানিয়েছেন। সেখান থেকে কী জবাব আসে, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন।
আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের ওই বাংলো আছে শহরের মাদারি রোডে। সেটি ডাকবাংলো হিসেবেই পরিচিত। শহরেরই এক ব্যক্তিকে সেটি লিজে দেওয়া হয়েছে। তাঁর লিজ নেওয়ার পর শুক্রবার ওই ডাকবাংলোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা। বুধবার রাতেই খবর পান পুরসভার কাউন্সিলাররা। এরপরেই তাঁরা দলীয় বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেন।
বৃহস্পতিবার সকালে পুরসভার বেশিরভাগ কাউন্সিলার তৃণমূলের ব্লক অফিসে বৈঠক করেন। কাউন্সিলাররা দলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, জেলা পরিষদ অনৈতিকভাবে ডাকবাংলো লিজ দিয়ে দিয়েছে। বৈঠকে নাকি বেশ কয়েকজন কাউন্সিলার ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। একটা সময় তাঁরা ডাকবাংলোতে গিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার কথাও বলেন। যদিও পরে তাঁদের বুঝিয়েসুজিয়ে শান্ত করা হয়। সব কথা তাঁরা দলের জেলা সভাপতি, জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও জেলা শাসককে জানিয়েছেন।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত প্রায় এক বছর ধরে ঢালাও সংস্কার করা হয়েছে ওই ডাকবাংলোর। কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে সংস্কারের পাশাপাশি এসি বসানো হয়েছে। নতুন রং করা হয়েছে। তৈরি করা হচ্ছে বাগান। বিদায়ি জেলা পরিষদের বোর্ড এই সংস্কারের কাজ করেছে। এদিকে পুরসভা আশায় ছিল, ঝাঁ চকচকে সেই ডাকবাংলোয় তারা অফিস করবে। সেখানকার ঘর, মাঠ ব্যবহার করে কীভাবে নাগরিক পরিষেবা দেওয়া হবে সেসব পরিকল্পনাও নাকি হয়ে গিয়েছিল। শেষবেলায় বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এই খবর সামনে আসে। যদি তাঁরা সেখানে অফিস করতে না পারেন, তবে বড়সড়ো আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন ফালাকাটার কাউন্সিলাররা। যদিও এখনই কেউ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ্যে গরমাগরম বিবৃতি দিতে চাইছেন না। দলের উপরমহল এবং জেলা পরিষদ তাঁদের দাবি নিয়ে কী পদক্ষেপ করে, তা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন তাঁরা।