রণজিৎ ঘোষ শিলিগুড়ি : ফের বাড়ল ওষুধের দাম। বিভিন্ন ওষুধ নির্মাতা সংস্থা প্রায় ৪০টি অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম নতুন করে বাড়িয়েছে। যার ফলে উত্তরবঙ্গেও মধ্যবিত্ত এবং গরিব মানুষের মাথায় হাত পড়তে বাধ্য। উত্তরবঙ্গের একাধিক ওষুধের দোকানে ঘুরে ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গিয়েছে, সবাই ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন। তবে, কিছু ওষুধের দাম কমেছে বলেও দাবি করেছেন বিক্রেতারা। মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের সংগঠনের বক্তব্য, কেন্দ্রের ভুল নীতি এবং গাফিলতির জেরেই ওষুধের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটছে বহুজাতিক সংস্থাগুলি। সরাসরি কেন্দ্র ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করুক এবং জিএসটি তুলে দিক, এই দাবিও করছেন অল ওয়েস্ট বেঙ্গল সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউনিয়নের দার্জিলিং জেলা সভাপতি কাশীনাথ সাহা। বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিডিএ) দার্জিলিং জেলা সম্পাদক বিজয় গুপ্তা বলেছেন, ‘মাঝে কিছু ওষুধের দাম কমেছিল। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই নতুন ব্যাচ এলেই ওষুধের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর হবে।’
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি, মার্চ মাস থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। ২০২১ সালের প্রথম থেকেই সমস্ত জীবনদায়ী ওষুধের দাম বাড়াতে শুরু করেছিল বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। প্রেসার, হার্ট, সিওপিডির ওষুধ থেকে শুরু করে ইনহেলার, নাকের ড্রপ সমস্ত কিছুরই দাম বাড়তে শুরু করে। সেই সময় থেকে যখনই নতুন ব্যাচের ওষুধ বাজারে এসেছে, সেই ওষুধের দাম কোথাও এক পাতায় ১৫-২০ টাকা তো আবার কোথাও ৫০-১০০ টাকাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, অতীতে দেশে ওষুধের দামের নিয়ন্ত্রণ করত ড্রাগ প্রাইসিং কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (ডিপিসিও)। সেই সময় ওষুধের দামের উপরে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে কেন্দ্র ডিপিসিও ভেঙে দিয়ে ন্যাশনাল ফার্মাসিটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি (এনপিপিএ) তৈরি করেছে। এই অথরিটি কোনওভাবেই ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যার ফলে কোম্পানিগুলি মর্জিমাফিক প্রতি ব্যাচেই ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। চলতি বছরে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ওষুধের দাম কমবেশি ১২ শতাংশ মতো বেড়েছে। ট্রাইট্রপিয়াম ব্রোমাইড ইনহেলেশনের দাম ৫৩৮ টাকা থেকে বেড়ে ৫৬০.৫৬ টাকা হয়েছে। লিভোসালবুটামল কম্পোজিশনের দাম বেড়ে ৩৩০ টাকা থেকে ৩৬৩ টাকা হয়েছে। নাকের ড্রপ অক্সিমেটাজলিন হাইড্রোক্লোরাইড কম্পোজিশনের ওষুধের দাম ৯৬ টাকা থেকে বেড়ে ১০৬ টাকা হয়েছে। অ্যামক্সিসিলিন এবং পটাশিয়াম ক্ল্যাভনেট প্রতি পাতার দাম ১৮২.৮০ টাকা থেকে বেড়ে ২০৪.৮০ টাকা হয়েছে। প্যান্টোপ্রাজল (৪০এমজি)-র একটি পাতার দাম ১৫৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৬৫ টাকা হয়েছে।
ওধুধের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ যে সমস্যায় পড়বেন তা স্বীকার করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে তাঁদের দাবি, বেশ কিছু ওষুধের দাম কমেছে। ওষুধ ব্যবসায়ী নীতিন কিন্ডোই বলেছেন, ‘কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে। আবার কিছু ওষুধের দাম কমেছে। এখন ওষুধের দাম যে কখন কী হচ্ছে বলা মুশকিল।’ শিলিগুড়ির হাতি মোড়ের ওষুধের দোকানে দাঁড়িয়ে সুভাষপল্লির বাসিন্দা অসীম চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘প্রতি মাসে প্রেসার, সুগার, গ্যাসের ওষুধ সহ অন্যান্য ওষুধ মিলিয়ে আমার আগে প্রায় ২৫০০ টাকা খরচ হত। গত এক দেড় বছরে তা বেড়ে ৩৫০০ টাকা হয়েছে। প্রতি মাসেই ওষুধ নিতে এসে শুনি দাম বেড়ে গিয়েছে। পেনশনের টাকায় সংসার চালাতে হয়। এভাবে ওষুধের দাম বাড়ছে, তার উপরে আবার জিএসটির নামে সরকার ওষুধে করও নিচ্ছে। কীভাবে বাঁচব, জানি না।’
বেঙ্গল ক্রেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট আলিপুরদুয়ার জোনের সভাপতি পরিতোষ দেবনাথ বলেন, ‘ওষুধের যে দাম বেড়েছে সেটা এখনও নজরে আসেনি। পুরোনো দামের ওষুধ আসছে, নতুন দামের ওষুধ এখনও আসেনি। সেটা আসার পর বলা যাবে কী প্রভাব পড়বে। দাম কতটা বাড়ল সেটার উপর প্রভাব অনেকটা নির্ভর করে।’
বিসিডিএ’র মালদা শাখার প্রাক্তন সম্পাদক রমাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য মনে করেন, ওষুধের এই দাম বাড়ার জন্য ওষুধ তৈরির মলিকিউলের দাম বাড়াই দায়ী। তাঁর অভিযোগ, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির জন্যই এভাবে দাম বাড়ছে জীবনদায়ী ওষুধের।’ আইএমএ-র কোচবিহার জেলা সভাপতি ডাঃ অমল বসাক বলেছেন, ‘গত এক দেড় বছরে ওষুধের কিছু দাম বেড়েছে সেটা আমরা লক্ষ্য করেছি। আমরা চাই ওষুধের দাম কমুক।’