প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: কাগজে কলমে চাল বরাদ্দ থাকলেও স্কুল পর্যন্ত তা পৌঁছোচ্ছে না। যার ফলে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল দিতে সমস্যায় পড়ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এমনও দিন যাচ্ছে, পড়ুয়াদের মুখে মিড-ডে মিল তুলে দিতে এক স্কুলকে অন্য স্কুল থেকে চাল ’ধার’ পর্যত নিতে হচ্ছে। এমনই অবস্থা পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকে। ঘটনাকে ঘিরে ’রহস্য’ দানা বেঁধেছে। মিড-ডে মিলের বিপুল পরিমাণ সরকারি চাল ’হাপিস’ করে দেওয়ার গুঞ্জনও ছড়িয়েছে। এনিয়েই এখন তোলপাড় চলছে জামালপুরে। ’রহস্য’ উদঘাটনে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছে বিরোধীরা।
জামালপুর ব্লকে প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি, শিশু শিক্ষাকেন্দ্র(এসএসকে) এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র(এমএসকে) মিলিয়ে স্কুলের সংখ্যা আড়াইশোর বেশি। একটি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে আবার তালা পড়ে গিয়েছে। সব স্কুল মিলে ৩০ হাজারেরও বেশি পড়ুয়া আছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ’পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের জন্য খাদ্য দপ্তর প্রতি তিন মাস অন্তর দুই হাজার কুইন্টালের বেশি চাল বিডিওর দায়িত্বে পাঠায়। সেই চাল ব্লকের পাঁচরা এলাকায় থাকা ডিলার রুমা চট্টোপাধ্যায়ের গোডাউনে মজুত হয়। বিডিওর সুপারিশ মেনে ডিলার স্কুলগুলির চাহিদা মতো চাল পৌঁছে দিয়ে থাকেন।
স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের বক্তব্য, এমন ব্যবস্থাপনায় সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্ত পাঁচ-ছয় মাস হল স্কুলে চাল সরবরাহের সেই ব্যবস্থা লাটে উঠে গিয়েছে। সেই কারণে মিড-ডে মিল চালাতে এখন তাঁদের মাথায় হাত পড়ে যাচ্ছে। ব্লকের বেরুগ্রাম অঞ্চলের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “আমরা চাহিদা মতো মিড-ডে মিলের চাল চেয়েও সময় মতো পাচ্ছি না, এটাই বাস্তব সত্য।“
বিদ্যালয়ের নাম ও তাঁর নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই প্রধান শিক্ষক বলেন, “এমনও দিন গিয়েছে স্কুলের পড়ুয়াদের মুখে মিড-ডে মিল তুলে দেওয়ার জন্য অন্য স্কুল থেকে চাল ’ধার’ নিতে হয়েছে। পরে চাল আসার পর সেই চাল শোধ করা হয়েছে।“ আবার জ্যোৎশ্রীরাম পঞ্চায়েত এলাকার একটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মিড-ডে মিলের চাল যথাযথভাবে না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সরাসরি জেলায় চিঠি পাঠিয়েছেন।
এবিষয়ে জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, “হ্যাঁ একথা ঠিক, সময়মতো যথাযথ পরিমাণে মিড-ডে মিলের চাল না পাওয়ার কথা বেশ কয়েকটি স্কুল চিঠি লিখে আমায় জানিয়েছে।“ এমনটা হওয়ার জন্য বিডিও সব দোষ চাপিয়েছেন ডিলার রুমা চট্টোপাধ্যায়ের ঘাড়ে। বিডিও বলেন, “এফসিআই গোডাউন থেকে চাল তো তুলেছেন ডিলার। সেই চাল যথাযথভাবে স্কুলে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তাঁরই। সেটা না হওয়ায় সব দায় ডিলারেরই।“
এরপরেই বিডিওর কাছে জানতে চাওয়া হয়, “ডিলারের এমন কাজের বিষয়ে জেলায় কি রিপোর্ট করেছেন?“ উত্তরে বিডিও বলেন, “চাল স্কুলে স্কুলে না পৌঁছানো নিয়ে ডিলারের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছিল। ডিলার জানান, গাড়ির সমস্যার জন্য তিনি চাল পৌঁছে দিতে পারেননি। পুজোর পর সব স্কুলে চাল পৌঁছে দেবেন বলেছেন। তাই লিখিত ভাবে জেলায় কিছু জানাইনি, মৌখিকভাবে সব জানিয়েছি।“
সব স্কুলে যথাযথভাবে সরবরাহ না হয়ে থাকলে চাল তো ডিলারের গোডাউনেই জমা থাকার কথা। সেই স্টক রিপোর্ট কি জেলায় জানানো হয়েছিল? এর জবাবে বিডিও বলেন, “স্টক রিপোর্ট তো ঠিকই আছে, ডিলার চাল ঘাটতির কোনও রিপোর্ট দেননি। তাহলে চাল ’হাপিস’ করে দেওয়ার যে ’গুঞ্জন’ ছড়িয়েছে সেটাই কি সঠিক? এই প্রশ্নের উত্তরেও বিডিওর নিশানায় ছিলেন সেই ডিলারই।
যদিও ডিলার রুমা চট্টোপাধ্যায়ের সাফাই, গাড়ির সমস্যা কিছুদিনের জন্য ছিল। কিন্তু তাঁর গোডাউনে বেশ কয়েকশো বস্তা চাল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি সমস্যায় পড়েছেন। জেলা বিজেপির সহ সভাপতি জিতেন ডকাল এনিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজির বক্তব্য, তিনি তদন্ত করে দেখবেন।