Monday, May 20, 2024
HomeTop News‘যা বলার এবার আদালতে এসে বলুন’, মহুয়ার আইনি নোটিশে সরব নিশিকান্ত

‘যা বলার এবার আদালতে এসে বলুন’, মহুয়ার আইনি নোটিশে সরব নিশিকান্ত

প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের বিরুদ্ধে নেওয়া আইনি পদক্ষেপ কি শেষে ‘বুমেরাং’ হতে চলেছে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর জন্য? দিল্লির রাজনৈতিক মহলে সোমবার এমনই জল্পনা উসকে গিয়েছে। ‘প্রিভিলেজ কমিটি’তে পাঠানো চিঠিকে কি আদৌ আইনি পরিসরে চ্যালেঞ্জ করা যায়? গেলে তার বিধিবদ্ধকরণে কি সুবিধা বা অসুবিধা দেখা যেতে পারে? তার সাংবিধানিক বৈধতাই বা কতটা? সেসব নিয়েই সোমবার আগাগোড়া তীব্র জল্পনায় উত্তপ্ত হয়ে রইল কেন্দ্রীয় রাজনীতি।

দেবীপক্ষের সূচনায়, রবিবার তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা সাংসদ মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে ‘শক্তিশেল’ হেনেছেন ঝাড়খণ্ড গোড্ডার বিজেপির সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। দুবাইবাসী ধনকুবের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির থেকে নেওয়া ‘উৎকোচ’ স্বরূপ অর্থ এবং উপহারের বিনিময়ে লোকসভায় আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। রবিবার এমনই অভিযোগ তুলে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে চিঠি পাঠিয়ে মহুয়াকে সাংসদ পদ থেকে সাসপেন্ড করার আর্জি জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। স্পিকার বিষয়টি প্রিভিলেজ কমিটিতে পাঠিয়েছেন বলে দাবি সংসদীয় সূত্রে। পাশাপাশি, আইনজীবী অনন্ত দেহাদ্রি মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সিবিআই প্রধানকে চিঠি দিয়েছেন। দু’জনেরই অভিযোগ, ব্যবসায়ী হীরানন্দানির থেকে অর্থ, উপহার নিয়ে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংসদে কথা বলেছেন মহুয়া। এর বিরুদ্ধে পালটা তোপ দেগে সোমবার আইনজীবী মারফত আইনি চিঠি পাঠিয়েছেন মহুয়া। তাতে নিশিকান্ত এবং দেহাদ্রির বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলেছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ। তিনি মহুয়া বলেছেন, জনসমক্ষে তাঁর নামে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করতে এই ষড়যন্ত্রের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে, লোকসভা অধ্যক্ষকে পাঠানো চিঠি প্রত্যাহার করতে হবে নিশিকান্ত দুবেকে। সোমবার এই আইনি নোটিশের বিরুদ্ধে পালটা সরব হয়েছেন নিশিকান্ত।

উত্তরবঙ্গ সংবাদ-কে দেওয়া এক বিশেষ বিবৃতিতে গোড্ডার বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে বলেন, ‘অনেক চিঠি হয়েছে, এবার নিজের আত্মপক্ষ সমর্থনে যা বলার আদালতে দাঁড়িয়ে বলুন মহুয়া।’ নিশিকান্ত জানিয়েছেন, তিনি খুব শিগগিরই আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন, মহুয়ার বিরুদ্ধে প্রতারণা, ঘুষ খাওয়া সহ আরও একাধিক মামলায় খুব শিগগিরই আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন তিনি। তবে দিল্লি হাইকোর্ট নাকি অন্য কোনও আদালতে মহুয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন নিশিকান্ত সে কথা এখনও জানাননি নিশিকান্ত। তিনি বলেছেন, ‘আদালতই শেষ কথা বলবে। আমি তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কথা বলিনা। এর আগেও উনি (মহুয়া) আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রিভিলেজ কমিটিতেও গেছিল সেই অভিযোগ, কিন্তু কিছুই প্রমাণ করতে পারেননি। এবারেও তিনি কিছুই প্রমাণ করতে পারবেন না, কিন্তু আমি পারব।’ তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মহুয়ার বিরুদ্ধে এহেন উৎকোচ গ্রহণের প্রেক্ষাপটে যা কিছু অভিযোগ এনেছেন দুবে, তা নিয়ে সংসদীয় প্রিভিলেজ কমিটিতেই নিজের বক্তব্য রাখতে পারতেন মহুয়া। সরাসরি আইনি নোটিশের প্রয়োজন ছিল না। এর ফলে বিষয়টি নিশিকান্ত দুবের পক্ষেই গেল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূল কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান সাংসদ জানিয়েছেন, ‘মহুয়া-নিশিকান্ত বৈরিতা আজকের নয়, বহু পুরনো। দল এনিয়ে কিছু বলেনি (আক্ষরিক অর্থে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এ নিয়ে কোনও স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করা হয়নি, দেওয়া হয়নি সরকারি বিবৃতি) কারণ এটি ব্যক্তিগত অভাব-অভিযোগের বিষয়, দল এর মধ্যে থাকবে না। নির্বাচনের মুখে কোনওরকম বিতর্কিত বিষয়ে জড়াবে না দল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে তলিয়ে ভাবনাচিন্তা না করে সরাসরি এভাবে লিগাল নোটিশ পাঠানো উচিত হয়নি কৃষ্ণনগরের সাংসদের।’ দলের অন্যতম শীর্ষ নেতৃত্ব হিসেবে ওই সাংসদ জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি প্রিভিলেজ কমিটিতে গিয়েছে। স্পিকার তা গ্রহণও করেছেন। সংসদীয় পরিসরেই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিতর্কের মীমাংসা হতে পারত। এর আগে যেমন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর ক্ষেত্রে হয়েছে। অধীর কি তাঁর সাসপেনশনের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিলেন? যাননি! সংসদেই বিষয়টি হেস্তনেস্ত হয়ে গিয়েছিল।’ প্রবীণ ওই সাংসদের মতে, ‘এতে সুবিধা হল নিশিকান্তেরই।’ একই সুর শোনা গিয়েছে, গোড্ডার বিজেপি সাংসদের কণ্ঠে। নিশিকান্ত বলেন, ‘খুব দ্রুত আদালতে মুখোমুখি হব আমরা। উনি (মহুয়া) পারলে নিজেকে নির্দোষ প্রতিপন্ন করুন।’ দুবে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, সংসদে আদানি গোষ্ঠীর সূত্র ধরে পরোক্ষে যে যে মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন মহুয়া মৈত্র, তাদের সবাইকে এই মামলায় ‘পার্টি’ করা হবে। তিনি বলেন, ‘মহুয়ার আইনি নোটিশের জবাব আইনের ভাষাতেই দেব যথাসময়ে। ওঁর সাংসদ পদ খারিজ না হওয়া পর্যন্ত থামব না।’

এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের দলের মধ্যেই বহু পোড়খাওয়া আইনজ্ঞ রয়েছে, যাদের কাছে মহুয়া এ বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারতেন। বাস্তবে তা হয়নি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ। তাদের মতে, নিশিকান্তের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতেই পারেন মহুয়া, কিন্তু লোকসভা অধ্যক্ষকে পাঠানো চিঠি প্রত্যাহার করতে তিনি বাধ্য করাতে পারেন না। সাংবিধানিক বিধিবদ্ধভাবে দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিসর, যা কখনই একে অন্যের পরিধিকে লঙ্ঘন করবে না। কিন্তু এই ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়েই আইনি পরিসরে নিজের ঘুঁটি সাজাবেন নিশিকান্ত যা অস্বস্তিতে ফেলতে পারে কৃষ্ণনগর সাংসদকে। তার ওপর দলের ভেতরেই মহুয়া-বিরোধী সংখ্যা কম নয়, অতীতে স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার মহুয়াকে সতর্ক করেছেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও বিষয়টি নিয়ে বুঝেশুনে পদক্ষেপ ফেলা উচিত ছিল তাঁর। দেখার বিষয় আইনি যুদ্ধের ময়দানে নিশিকান্ত দুবেকে কিস্তি মাত দিতে পারেন, নাকি নিজেই ধরাশায়ী হন মহুয়া মৈত্র, এই মুহূর্তে সেদিকেই নজর রাখছে কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক মহল।

Kuhelika Barman
Kuhelika Barmanhttps://uttarbangasambad.com/
Kuhelika Barman is working as Sub Editor Since 2016. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Digital. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

0
মাছ ধরার জালে আটকে থাকা অজগর সাপ উদ্ধার।   চালসা,২০ মে -এলাকায় মাছ ধরার জালের মধ্যে আটকে যায় অজগর সাপ।খবর পেয়ে টোটো চালক তথা পশু...

Babun Banerjee | নামের ওপর লেখা ‘ডিলিটেড’! ভোট দিতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রীর ভাই বাবুন

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ভোট দিতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) ভাই বাবুন ওরফে স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় (Swapan Banerjee)। তিনি  হাওড়া লোকসভা...

বছরের যেকোনও সময় জঙ্গলে ঘুরতে ভালোবাসেন? রইল ৫ জায়গার হদিস…

0
    উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ভ্রমণপিপাসু মানুষ অনেক ধরনের হয়। কেউ জঙ্গলে ঘুরতে ভালোবাসেন, কেউ সমুদ্র, আবার অনেকে পাহাড় যেতে

Railways | ডুয়ার্সে ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে পরিকাঠামো উন্নয়ন রেলের

0
পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: হাতিমৃত্যুর (Elephant Death) ঘটনার পর ডুয়ার্সের জঙ্গল (Dooars Jungle) লাগোয়া এলাকা দিয়ে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন (Train) বেশ কিছু নিয়ম মেনে...

বেয়ার গ্রিলসের সঙ্গে তুলনা, রাজগঞ্জের শ্মশানঘাটে সংসার পেতেছেন মোহন দাস

0
রাজগঞ্জ: রাজগঞ্জের কালীনগরের করতোয়া নদীর সেতুর পাশেই অবস্থিত শ্মশানঘাট। রাজগঞ্জ পোস্ট অফিস মোড় হয়ে কালীনগর যেতেই করতোয়া নদীর সেতু পড়ে। আর সেই সেতুর ডান পাশেই...

Most Popular