কোচবিহার: ঐতিহ্যবাহী স্থানে বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান। কোচবিহারে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। আয় বাড়াতে দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড আনন্দময়ী ধর্মশালাকে বিয়েবাড়ি হিসেবে ব্যবহারে ভাড়া দিচ্ছে। বৈরাগীদিঘির ধারে কোচবিহারের মদনমোহন ঠাকুরবাড়ির লাগোয়া ঐতিহ্যবাহী আনন্দময়ী ধর্মশালা সংক্রান্ত এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। কোচবিহার রয়্যাল ফ্যামিলি সাকসেসর্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের তরফে বিষয়টি নিয়ে খুব শীঘ্রই আন্দোলনে নামার কথা জানানো হয়েছে। দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের সচিব গোপালকৃষ্ণ ধারা বললেন, ‘বিয়েবাড়ি হিসেবে ব্যবহারের জন্য কয়েক মাস অগেই আনন্দময়ী ধর্মশালা বুক করা হয়েছে। আমি এখানে নতুন এসেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের অকালপ্রয়াত ভগিনী পাঙ্গার রানি আনন্দময়ীর স্মৃতিতে ১৮৮৯ সালের ৮ জুলাই এই ধর্মশালাটি শিলান্যাস হয়। ১৮৯০ সালের ৪ মে এটির প্রতিষ্ঠা হয়। আগে এখানে বিনা খরচে একদিন থাকাখাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। বিশেষ প্রয়োজনে অতিরিক্ত সময় থাকার অনুমতিও পাওয়া যেত। সাধুসন্ত এবং অভাবগ্রস্তদের সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। তবে এখন আর এখানে বিনা পয়সায় থাকা-খাওয়ার সেই ব্যবস্থা নেই। গোটা বছর বিভিন্ন পর্যটক এখানে থাকেন। তাঁদের জন্য ডর্মিটরির পাশাপাশি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক ঘরের ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে এর জন্য পর্যটকদের মোটা টাকা গুনতে হয়।
অন্যদিকে, ধর্মশালার ভেতরে থাকা মাঠটি মোটামুটি সারাবছর খালিই পড়ে থাকে। মাঝে কয়েক বছর অবশ্য রাসমেলা ঘুরতে আসা বাইরের মানুষজন যাতে ধর্মশালায় বিনা পযসায় রাত কাটাতে পারেন সেজন্য মাঠের মধ্যে শিবির করে দেওয়া হত। রবিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আনন্দময়ী ধর্মশালার মাঠে জমকালোভাবে বিয়ের মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে। সোমবার সেখানে বিয়ের অনুষ্ঠান রয়েছে। আগামী কয়েকদিন এমনই বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা রয়েছে। ঘটনার খবর জানাজানি হতেই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জোরালো হয়েছে।
কোচবিহার রয়্যাল ফ্যামিলি সাকসেসর্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মুখপাত্র কুমার মৃদুলনারায়ণ বলেন, ‘এই জায়গাটির সঙ্গে কোচবিহারের আবেগ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। বিষয়টিকে কড়া ধিক্কার জানাই। শীঘ্রই দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি তথা জেলা শাসকের সঙ্গে দেখা করে ব্যবস্থা দেওয়ার দাবি জানাব।’ ইতিহাসবিদ ঋষিকল্প পাল বললেন, ‘এরকম পদক্ষেপের আগে ধর্মশালা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও ইতিহাস কর্তৃপক্ষের জানা উচিত ছিল।’ সাহিত্যিক দেবব্রত চাকি বললেন, ‘বিয়েবাড়ির জন্য ভাড়া দেওয়ায় আনন্দময়ী ধর্মশালার পবিত্রতা রক্ষা হবে তো? আশা করি দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের সচিব এর উত্তর দেবেন।’