গৌরহরি দাস, কোচবিহার: ঐতিহ্যবাহী আনন্দময়ী ধর্মশালায় বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান নিয়ে কোচবিহারে ক্ষোভ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সোমবার উত্তরবঙ্গ সংবাদে এই খবর প্রকাশ হওয়ার পর তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। এ নিয়ে প্রশাসন, দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড ও কোচবিহার হেরিটেজ কমিটির সমালোচনা শুরু হয়েছে।
খবরের কাটিং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক দীপান্বিতা দাশগুপ্ত লিখেছেন, রাজ আমলের আনন্দময়ী ধর্মশালায় বিয়ের আসর বসলে নহবতের দায়িত্ব হেরিটেজ কমিটিকে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। সবাই মিলে কোচবিহার খ্যাত ভুয়ো হিস্টরিয়ানদের নিয়ে শুধু মিটিং করবে কেন? বিয়েতে সানাই, তবলা, ঝুনঝুনি, বাঁশি আর ঢোল বাজিয়ে সাধারণ মানুষকে আনন্দও দিক। বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালাটা কিন্তু দারুণ মানিয়েছে।
তাঁর এই পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে কোচবিহার হেরিটেজ কমিটির সদস্য ঋষিকল্প পাল লিখেছেন, কিছু বিষয় বোধহয় রেখে ঢেকে লিখতে হয়। তারই উত্তরে দীপান্বিতা লিখেছেন, আমার তো সাধারণ মানুষ হিসাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। ফলে আমি মত প্রকাশ করতেই পারি। আমি শাক দিয়ে মাছ কোনওদিনই ঢাকি না। দীপান্বিতার পোস্টের উত্তরে উপেন্দ্রনাথ লিখেছেন, মদনমোহনবাড়ির পূর্বদিকে মাছ-মাংস রান্না খাওয়া হবে। পুবাল বাতাসে সেই গন্ধ ভেসে কোনদিকে যাবে? মনোমিতা সরকার লিখেছেন, ধিক্কার জানানোর কোনও ভাষা নেই। রুমিতা বসাক লিখেছেন, বিয়ে মানে সেখানে খাওয়াদাওয়া, এতে মন্দির এবং ধর্মশালা পরিবেশ চত্বর নোংরা হবে।
কোচবিহার রয়্যাল ফ্যামিলি সাকসেসর্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মুখপাত্র কুমার মৃদুলনারায়ণ লিখেছেন, আনন্দময়ী ধর্মশালায় বিয়ের আয়োজন বিষয়টা খুবই বিরক্তিকর। এই ধর্মশালা তৈরির ইতিহাস ও উদ্দেশ্য বা ইতিপূর্বে প্রচলিত প্রথাকে অগ্রাহ্য করে নতুন ভাবনা মোটেও কাম্য নয়। আমরা এই সিদ্ধান্তে দুঃখিত, মর্মাহত, আহত। অবিলম্বে এটা বন্ধ করা উচিত এবং ভবিষ্যতে এরকম পরিস্থিতি যাতে না আসে তা কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। এখানে বিয়ের অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া একদমই ঠিক হয়নি। কর্তৃপক্ষের আরও দায়িত্ববান হওয়া উচিত ছিল।
ভগীরথ দাস লিখেছেন, প্রতিবাদ হোক সমস্বরে। ঘটনার নিন্দা করছি। এনাক্ষী মজুমদার লিখেছেন, এইরকম অসভ্যতা বন্ধ করতেই হবে। পোস্টে কুমার মৃদুলনারায়ণ আবার লিখেছেন, ভাবছি যে মানুষটা পারমিশন নিয়েছেন তাঁর মানসিকতাই বা কী। তিনি কিছুই কি জানেন না।
সুশান্তকান্তি রায় লিখেছেন, বড় কোনও পদক্ষেপ করা দরকার। দীননাথ রায় লিখেছেন, এটা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। রাধাকান্ত বর্মন, বুদ্ধিজীবী কল্যাণময় দাস ও নীলাদ্রি দেব সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।কোচবিহার সদর মহকুমা শাসক কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। বলে সেখানে কে কী বলেছেন তা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। কোচবিহার রয়্যাল ফ্যামিলি সাকসেসর্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট নামে কোনও কমিটির কথাও আমি জানি না। বিভিন্ন লেখক, সাহিত্যিকদের যদি কোনও ক্ষোভ থাকে তাহলে তাঁরা আমাদের এসে জানান। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলব।’ রাজ আমলের আনন্দময়ী ধর্মশালায় বিয়ের আসর বসলে নহবতের দায়িত্ব হেরিটেজ কমিটিকে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। বিয়েতে সানাই, তবলা, ঝুনঝুনি, বাঁশি আর ঢোল বাজিয়ে সাধারণ মানুষকে আনন্দও দিক।