শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি : গতবারের বেআইনি হোর্ডিং-বিতর্কের আঁচ এখনও নেভেনি। তার মধ্যেই আবার মাটিগাড়ায় রেলের জমিতে হোর্ডিং বসানো নিয়ে নতুন করে বিতর্ক পাকিয়ে উঠল। বৃহস্পতিবার সেখানে একদল লোক অনুমতি ছাড়াই হোর্ডিং বসানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। তাদের কাছেও এ সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্র ছিল না। এমনকি আরপিএফ চ্যালেঞ্জ করার পরেও তারা কোনও নথি নিয়ে এসে দেখাতে পারেনি। পরে অবশ্য ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রেল।
বৃহস্পতিবার দুপুর তখন বারোটা। মাটিগাড়ার শপিং মলের উলটোদিকে রেললাইন পরিদর্শন করতে এসে অবাক ট্র্যাকম্যানরা। কিছুদিন আগেই রেললাইনের ধারে ওই রেলের জমিতে একের পর এক অবৈধভাবে হোর্ডিং বসাকে কেন্দ্র করে বিস্তর বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেসব গর্ত এখনও ভরাট হয়নি। তারমধ্যেই ফের নতুন করে হোর্ডিং বসানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। নিয়ে আসা হয়েছে গ্যাস কাটার। চলছে লোহার কাঠামো বসানোর কাজ। সরাসরি খবর দেওয়া হয় বাগডোগরার আরপিএফ সাব-ইনস্পেকটর ভীপেন্দ্র সিংকে।
আগেরবারের মতো এবারেও আরপিএফ কিংবা ট্র্যাকম্যানদের কাছে এসংক্রান্ত কোনও তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আসেনি। তাহলে ফের অবৈধভাবে হোর্ডিং বসাচ্ছে কারা? খোঁজ করতেই নাম এল রানা সরকার নামের এক ব্যক্তির। টেন্ডার সংক্রান্ত অনুমতিপত্র রয়েছে? ফোনে রানার সঙ্গে ভীপেন্দ্র যোগাযোগ করতেই উত্তরে রানা অবশ্য বলেছিলেন, ‘কাগজ আছে। নিয়ে আসছি।’ বিকেলের দিকে রানা এলেন ঠিকই। তবে সঙ্গে কোনও কাগজপত্র আর আনতে পারেননি। তাঁর দাবি, ‘তাড়াতাড়ি আসার জন্য কাগজ আনতে ভুলে গিয়েছি।’
তা বলে আর শেষরক্ষা হয়নি। ব্যবস্থা নিয়েছে রেল। হোর্ডিং বসাতে আসা দুই ব্যক্তি সহ রানার বিরুদ্ধে রেললাইনের ক্ষতি সহ রেললাইনের ধারে অবৈধভাবে হোর্ডিং বসানোর অপরাধে মামলা করেছে রেল। প্রশ্ন উঠছে, এক মাসের ব্যবধানে একই জায়গায় অনুমতি ছাড়াই হোর্ডিং বসাতে কেন মরিয়া অসাধু হোর্ডিং ব্যবসায়ীরা? সপ্তাহ দুয়েক আগে হোর্ডিং বসানোর পেছনে নাম জড়িয়েছিল পদমবাহাদুর ছেত্রীর। ওই ব্যক্তিই কি ফের রানা সরকারের মাধ্যমে হোর্ডিং বসানোর চেষ্টা করছেন?
তবে ইতিমধ্যেই আরপিএফ-এর কাছে আসা তথ্য অন্য কথা বলছে। ভীপেন্দ্র বলছেন, ‘এটা আর একটা পার্টি। আমরা জানতে পেরেছি, পদম নেপালে পালিয়ে গিয়েছে। কিছুদিন আগে ওর আইনজীবী আমার সঙ্গে দেখা করবে বলে যোগাযোগ করেছিল। আমি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি, ওকে গ্রেপ্তার হতেই হবে।’
একটা বিষয় পরিষ্কার, পদম ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন হোর্ডিং ব্যবসায়ীর নজর পড়েছে মাটিগাড়ার শপিং মলের উলটোদিকের রেললাইন বরাবর জমিতে। হঠাৎ করে এমন কেন ঘটছে, তবু বুঝে উঠতে পারছে না আরপিএফ-এর বাগডোগরার সাব-ইনস্পেকটর। বলছেন, ‘তদন্ত করতে হবে।’
যদিও রেলের ওই জমির ক্রমবর্ধমান গুরুত্বই একশ্রেণির হোর্ডিং ব্যবসায়ীর এহেন মরিয়া হয়ে ওঠার কারণ বলে মনে করছে ব্যবসায়ী মহল। ব্যবসায়ীদের কথায়, রেলের ওই জমির পেছনেই একটি বিলাসবহুল আবাসন উঠছে। উলটো পাশের শপিং মলের কাছেই একটি বড় মার্কেট কমপ্লেক্স গড়ে উঠছে। আবার ফোর লেনের কাজও চলছে। এই পরিস্থিতিতে কোনওভাবে যদি রেলের জমির ওই অংশে হোর্ডিং বসানো যায়, তাহলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেকটাই লাভবান হওয়া যাবে।
বিষয়টি স্বীকার করছেন নর্থবেঙ্গল অ্যাড অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রানা সাহা। তাঁর বক্তব্য, ‘ভবিষ্যতে ওই রাস্তাটা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এই বিষয়টাকে মাথায় রেখেই ওই জায়গায় হোর্ডিং বসানোর চেষ্টা চলছে। তবে অবৈধভাবে যারা হোর্ডিং বসানোর চেষ্টা করছে, তাদের পাশে অ্যাসোসিয়েশন নেই।’
এদিকে, সপ্তাহ দুয়েক আগে হোর্ডিং বসানোর ঘটনায় রেলের ওই এলাকায় যাওয়া-আসা করা কর্মীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। রেলের কাটিহার ডিভিশন থেকে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছিল, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও ধরনের তথ্য না এলে শপিং মলের উলটোদিকে রেলের জমিতে কাজ করতে দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, আরপিএফ-কে জানাতে হবে। তাই এদিন কাজ শুরু হতেই এলাকায় এসে হাজির হয় আরপিএফ। রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম শুভেন্দ্র কুমার বলেন, ‘আরপিএফ-এর ওই জায়গায় নজর রয়েছে। প্রয়োজনে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়া হবে।’