দিনহাটা: একদিকে রেলের উন্নয়ন ভাবনা, অন্যদিকে উচ্ছেদের শঙ্কা। দিনহাটা স্টেশনকে ঘিরে নতুন করে দানা বাঁধছে রাজনীতি। অমৃত ভারত প্রকল্পে সেজে উঠতে চলেছে সীমান্ত লাগোয়া দিনহাটা স্টেশন। ঢেলে সাজানো হবে পরিকাঠামো। তার জন্য প্রয়োজন বিশাল পরিমাণ জমি। সাহেবগঞ্জ রোড, ভাংনি মোড়, ঝুনঝুনপট্টি এলাকায় রেলের জমিতে বসবাসকারী প্রায় ২০০ পরিবারকে নোটিশ দিয়ে দেখা করতে বলেছে রেল। আর তাতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা ওই পরিবারগুলির।
রেলের নোটিশ পেয়ে তড়িঘড়ি আন্দোলনে নেমেছেন বাস্তু উচ্ছেদ বিরোধী ও রাস্তা বাঁচাও যৌথ মঞ্চের সদস্যরা। বুধবার মঞ্চের তরফে দিনহাটা স্টেশন চত্বরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। অরাজনৈতিক মঞ্চ হলেও গোটা কর্মসূচিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তৃণমূল নেতারা। উপস্থিত ছিলেন দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীশংকর মাহেশ্বরী, তৃণমূলের দিনহাটা শহর ব্লক সভাপতি বিশু ধর, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার শম্ভু অধিকারী সহ শহরের নেতারা। ফলে লোকসভার আগে উচ্ছেদ বনাম উচ্ছেদ বিরোধী রাজনীতি জমে উঠেছে দিনহাটায়। রেলের জমিতে বসবাসকারীদের কার্যত উসকে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা বিশু ধর। তাঁর বক্তব্য, ‘মুখ্যমন্ত্রী কৃষকদের স্বার্থে ২৭ দিন অনশন করেছিলেন। আপনাদেরও আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে ঘর না ছাড়ার।’ বাসিন্দাদের বালিশ, কম্বল নিয়ে স্টেশনে থাকার নিদানও দেন তিনি।
লোকসভা ভোটের আগে উচ্ছেদ নিয়ে যেভাবে তৃণমূল রাজনীতি শুরু করছে, তাতে খানিক অস্বস্তিতে বিজেপি। যদিও দলের জেলা সম্পাদক অজয় রায়ের পালটা তোপ, ‘তৃণমূল আসলে উন্নয়ন চায় না। তাই সাধারণ মানুষকে ভুল পথে চালিত করছে। তৃণমূল তো ক্ষমতায় রয়েছে, তারাই বাসিন্দাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারে।’ হঠাৎ রেলের নোটিশে বিপাকে পড়েছেন শতায়ু নির্মলা মালাকার। তাঁর কথায়, ‘আমার ছোট্ট একটা ঘর রয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চলে। এখন কোথায় যাব বুঝতে পারছি না।’
আরেক বাসিন্দা পুতুল বর্মন বলছেন, ‘প্রায় ৭০ বছর থেকে এখানে রয়েছি। হঠাৎ করে রেল সোমবার নোটিশ দিয়ে জানিয়েছে আলিপুরদুয়ারের রেল অফিসে দেখা করতে হবে। বাড়িও ছাড়তে বলা হয়েছে। আমরা এখন কোথায় যাব?’ নির্মলা, পুতুলদের মতো সবার এখন একটাই দাবি, পুনর্বাসন দিক রেল। সেই দাবিতেই আগামী শনিবার যৌথ মঞ্চের তরফে দিনহাটা স্টেশনে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী এই আন্দোলনকে কোনওভাবেই সমর্থন করেননি। তাঁর যুক্তি, যেহেতু ওই বাসিন্দারা রেলের জায়গায় রয়েছেন, সেহেতু তাঁদের সরতে হবেই।
উওর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে সরাসরি পুনর্বাসনের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘রেলের পুনর্বাসন দেওয়ার কোনও অধিকার নেই। সেটা দিলে রাজ্য সরকার দিতে পারে।’ সবমিলিয়ে লোকসভা ভোটের আগে উচ্ছেদ নিয়ে তুমুল তর্জা দিনহাটায়। ওই বাসিন্দাদের ভবিষ্যৎ কী, এখন সেটাই সবার প্রশ্ন।