উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে সময় সীমা দিলেন ১৫ দিন।জনসমক্ষে চাইতে হবে ক্ষমা। এই মর্মে রাজভবনে আইনি নোটিশ পাঠাল রাজ্যের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্যরা। এমন পদক্ষেপের নেপথ্যের কারণ, আচার্য অর্থাৎ রাজ্যপাল তাঁর বক্তব্যে সামাজিক এবং মানসিকভাবে হেনস্থা করছে উপাচার্যদের।যদি সি ভি বোস ক্ষমা না চান তাহলে প্রাক্তন উপাচার্যেরা মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দেন প্রত্যেকের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা করে জরিমানাও দাবি করা হবে।
উপাচার্যদের এমন সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে রাজ্যপালের এক ভিডিও বার্তা। সেই ভিডিও বার্তায় বোস বলেছিলেন, ‘‘আপনারা জানতে চাইবেন, কেন সরকারের মনোনীত ভিসিদের নিয়োগ করতে পারিনি। তাঁরা কেউ ছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত, কেউ ক্যাম্পাসে রাজনীতির খেলা খেলেন, কেউ আবার ক্যাম্পাসে কোনও ছাত্রীকে হেনস্থা করেছেন। তাঁদের কিভাবে মেয়াদ বৃদ্ধি করব?’’ রাজ্যপালের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার এই পদক্ষেপ নেন ১২ জন প্রাক্তন উপাচার্য। অন্যদিকে উপাচার্যরা বলেন, ‘আচার্য চাইলে তাঁদের মেয়াদ বৃদ্ধি নাই করতে পারেন। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কে অসম্মানজনক কথা প্রচার করতে পারেন না।কোনও প্রমাণ ছাড়া আচার্য কিভাবে আমাদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারেন? এতে আমাদের মানহানি হয়েছে। আমরা সামাজিক এবং মানসিকভাবে হেনস্থার সম্মুখীন হয়েছি।’
রাজভবনে যে ১২ জন উপাচার্যের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে নোটিশ গেছে তাঁরা হলেন, আশুতোষ ঘোষ, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য নিমাইচন্দ্র সাহা, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য মানস সান্যাল, বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য স্বাগতা সেন, কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দেবকুমার মুখোপাধ্যায়, গৌরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য শান্তি ছেত্রী, সিধো কান্হো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দীপক কুমার কর এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্র। নোটিশের বয়ান বলছে, ‘আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সকলের সামনে রাজ্যপালকে তাঁর বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। তা না হলে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন তাঁরা। সেই সঙ্গে ৫০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের দাবিও করা হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছর জুলাই মাসে রাজ্যের ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ বৃদ্ধি করার কথা ছিল। কিন্তু আচার্য বোস মাত্র তিন জন উপাচার্যের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন। বাকি ২৪ জন হারায় পদ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ করা নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে তুমুল সংঘাত রাজ্যপালের।রাজ্যপাল একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করছেন।এই প্রসঙ্গে একাধিকবার বোসের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারির সুরেই জানিয়েছিলেন, ‘কোনও বিশ্ববিদ্যালয় রাজভবনের কথা মতো চললে বেতন বন্ধ করে দেবে রাজ্য।’ সেই হুঁশিয়ারিতে কর্ণপাত করেননি রাজ্যপাল।সেইদিন রাতেই কৃষ্ণনগরের কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্যকে নিয়োগ করেছিলেন।এবার দেখার আজকের এই নোটিশ নিয়ে কি প্রতিক্রিয়া দেন রাজ্যপাল।