বালুরঘাট: প্রায় ছয় বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লোকপ্রসার প্রকল্পে আবেদন পত্র জমা নেওয়ার কাজ বন্ধ। যার জেরে শিল্পী ভাতা পেতে নাম নথিভুক্ত করতে পারছেন না জেলার লোকশিল্পীরা। ভাতা না মেলায় আর্থিক সংকটে ভুগছেন শিল্পীরা।
বাংলার লোকশিল্প ও সংস্কৃতির উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৩ সালে লোকপ্রসার প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে। যার সূচনা হয় ২০১৪ সালে। এর মাধ্যমে লোকশিল্পীদের সম্মান জানাতে তাদের পরিচয় পত্র দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি, এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় বিলুপ্তির পথে হাঁটা প্রাচীন লোকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার কথা বলা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক অনটনের সঙ্গে মোকাবিলা করতে থাকা শিল্পীরা আর্থসামাজিক ভাবে কিছুটা হলেও উঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রকল্পের অধীনে লোকশিল্পীর মাসিক এক হাজার টাকা করে ভাতা পান। পাশাপাশি, কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে দিন প্রতি হাজার টাকা পান। আবার ৬০ বছর পেরিয়ে গেলে এক হাজার টাকা পেনশন পান তারা। কিন্তু সেই জনমুখি প্রকল্প বর্তমানে ধুঁকতে বসেছে। কারণ সেখানে আর নতুন করে কোনও লোকশিল্পীর আবেদনপত্র নেওয়া হচ্ছে না। ২০১৭ সালের পরে আর নাম নেওয়া হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। যার জেরে সমস্যায় পড়েছেন প্রচুর লোক শিল্প ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত শিল্পীরা।
জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের তরফে জানা গিয়েছে, সারা রাজ্যেই এই প্রকল্পে নতুনভাবে নাম নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। নতুন করে আবার শুরু করার কাজ চলছে। তবে দুয়ারে সরকার শিবিরে জেলার কয়েকজন লোকপ্রসার প্রকল্পে আবেদন করেছিলেন। তার মধ্যে বালুরঘাটের দুজন, কুশমন্ডির একজন ও তপনের একজন রয়েছেন। তাদের নাম তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরে এসেছে। তাদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রকৃত শিল্পী কিনা তা যাচাই করা হবে বলে জানা গিয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় প্রায় ৩৫০০ জন লোকশিল্পী লোকপ্রসার প্রকল্পের আওতায় ভাতা পাচ্ছেন। যদিও পাশের জেলা উত্তর দিনাজপুর প্রায় ১৬ হাজার জন লোকশিল্পী মাসিক ভাতার আওতায় এসেছেন। পার্শ্ববর্তী দুই জেলায় শিল্পী ভাতার ক্ষেত্রে সংখ্যার এই বিশাল তারতম্য নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে এই জেলার লোক শিল্পীদের মধ্যে। তবে ধীরে ধীরে আবার মূল স্রোতে আসছে এই প্রকল্প।
কুশমন্ডি ব্লকের ঊষাহরণ গ্রামে বাড়ি খন পালাগান দলের লোকশিল্পী চিমু বসাকের। তার মতে, ‘আর্থিক অনটনকে সঙ্গী করে আমরা বাংলার শিল্পকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। সরকারের তরফে ভাতা পেলে সংসার চালাতে অনেকটাই সুবিধা হত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার ফলে আবেদন করতে পারছি না। আগে যারা করেছে তারা শুনেছি ভাতা পাচ্ছেন। আমরা বঞ্চিত থেকে যাচ্ছি।’
জেলার লোকসংস্কৃতি বিষয়ক গবেষক কৌশিক ঘোষ বলেন, ‘শিল্পী ভাতার নতুন আবেদন বন্ধ হয়ে রয়েছে আমিও শুনেছি। লোকশিল্পীরা একটা জনগোষ্ঠীর পরিচয় বহন করে। গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি ধরে রয়েছে। লোকশিল্পী বাঁচাতে চাইলে শিল্পীদের বাঁচাতে হবে। আর্থিক দুর্বলতার কারণে এই শিল্প হারিয়ে যেতে পারে। আবার আবেদনপত্র জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে তাদের কষ্ট কিছুটা কমত।’
জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক রাজেশকুমার মণ্ডল জানান, ‘আবেদনপত্র নেওয়া সেভাবে শুরু হয়নি। তবে স্পেশাল কেসে কিছুটা হচ্ছে। সরাসরি আমি জমা নিচ্ছি না। তবে ঘুরপথে নিতেই হচ্ছে। প্রকৃত শিল্পী কিনা আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে। তাছাড়াও, নতুন একটি অর্ডার এসেছে। তা দেখে বাকিটা বলতে পারব।’