কালিয়াগঞ্জ: এঁটেল মাটির দলায় ওদের হাতের ছোঁয়া পড়লে প্রদীপের আকার নেয়। সেই মাটির প্রদীপ কেনার হিড়িক পড়ে বাড়ির দুয়ারে। তখনই যেন আলোকিত হয় এদের ঘর। প্রদীপ বিক্রি করলেই তো আসে অর্থ। আমেরিকা, জাপান, রাশিয়া, জার্মানিতে রপ্তানি হয় কালিয়াগঞ্জের টেরাকোটার প্রদীপ সহ অন্যান্য পোড়া মাটির তৈরি সামগ্রী। দীপাবলি উপলক্ষ্যে দিনরাত এক করে রকমারি প্রদীপের আকার দেন কুমোর পাড়ার এই টেরাকোটা শিল্পীরা। কালিয়াগঞ্জ ব্লকের মোস্তাফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাট পাড়ার পরিবার গুলো সারা বছরের সঙ্গে সঙ্গে দীপাবলি উপলক্ষ্যে মাটির প্রদীপ তৈরিতে দম ফেলবার সময়টুকু পান না। এই বছর মাটির তৈরি প্রদীপের চাহিদা প্রায় দ্বিগুন। পোড়া মাটির প্রদীপ, রং বেরঙের নকশা করা প্রদীপে শহরের বাবুদের চাহিদা মেটাতে বদ্ধ পরিকর এই শিল্পীরা। চলছে পছন্দ মতন প্রদীপের জন্য অগ্রীম বায়নাও। স্ত্রী, পুত্র, মা, বাবা মিলে প্রদীপ তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে হাট পাড়ার পরিবার গুলো। শুধু দেশের মাটিতেই নয়, বিদেশেও মাটির প্রদীপ রপ্তানিতে এসেছে জোয়ার। এক প্রদীপ, দ্বি প্রদীপ, পঞ্চ প্রদীপ থেকে শুরু করে একশো আট প্রদীপ পর্যন্ত তৈরি করছেন এই টেরাকোটা শিল্পীরা।
এই বিষয়ে হাটপাড়ার টেরাকোটা শিল্পী দুলালচন্দ্র রায় বলেন, ‘দীর্ঘ ২৭ বছর থেকে এই কাজ করছি। অন্যবারের তুলনায় দীপাবলিতে বিক্রি বাড়বে বলে আশা রাখি। এই টেরাকোটার কাজ করেই চলে সংসার জীবন। প্রদীপের পাশাপাশি ধুনুচি, ধূপদানি, বড় লন্ঠন, মোমদানির বিক্রিও এই পুজো মরসুমে বিক্রি অনেকটাই বেড়ে যায়। শিলিগুড়ি, কলকাতা ছাড়াও ওডিশা,মহারাষ্ট্র, ছত্রিশগড় রাজ্যে আমাদের হাতে তৈরি টেরাকোটার জিনিস পত্র সারা বছর পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যায়।’
এলাকার আরেক টেরাকোটা শিল্পী সমরেশ রায়ের কথায়, ‘বংশ পরম্পরায় পারিবারিক ব্যবসা আমাদের। প্রতিবছর বর্ষার আগে এঁটেল মাটি বাড়িতে সারা বছরের কাজের জন্য বস্তায় ভর্তি করে রাখি। চিনের লাইটে নিষেধাজ্ঞা আসতেই প্রদীপের চাহিদা অনেকটাই বেশি। তাই পরিবারের সকলে মিলে হাত লাগিয়ে রাত জেগে কাজ করে চলেছি। আমার হাতে তৈরি প্রদীপ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হয়। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রদীপ তৈরিতে বৈচিত্র আনার চেষ্টা করি। ক্রেতারাও আকর্ষিত হয়। আমি চাই আমার আগামী প্রজন্ম এই ব্যবসার হাল ধরুক।‘