বর্ধমানঃ উত্তরপ্রদেশ (Uttar pradesh) থেকে বাংলায় এসে কেউ দিনের বেলায় বিক্রি করতেন কম্বল। আবার কেউ বিক্রি করতেন রাজস্থানী কুলফি। আর রাত হলে তারাই হয়ে যেতেন ভয়ংকর দুষ্কৃতী। পূর্ব বর্ধমানের (East Burdwan) কাটোয়ার অগ্রদ্বীপে সোনার দোকানে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় সামনে এল এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেয়েছে তারা ‘বাদায়ূং গ্যাং’-এর (Badayung Gang) সদস্য। ধৃতদের কাছ থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে প্রায় ২৬ লক্ষ টাকার সোনা-রূপোর গয়না, নগদ ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা, ৫ টি আগ্নেয়াস্ত্র সহ ৪০ রাউন্ড গুলি এবং ১১টি মোবাইল ফোন। দুষ্কৃতীদের এমন রূপ বদলে স্তম্ভিত জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা।
পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি কাটোয়ায় সোনার দোকানে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় কাটোয়ার মিলপাড়া থেকে গ্রেপ্তার হয় সাত দুষ্কৃতী। ধৃতদের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের বাদাউন জেলা ও উত্তরপ্রদেশের আরাইয়া জেলায়। পুলিশের দাবি এরা প্রত্যেকেই উত্তরপ্রদেশের ’বাদায়ূং গ্যাং’ এর সদস্য বলে স্বীকার করেছে। তারা কাটোয়া শহরের মিলপাড়া এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থেকে দিনের বেলায় কেউ কম্বল আবার কেউ রাজস্থানী কুলফি বিক্রি করতো। আসলে তারা কম্বল বা রাজস্থানী কুলফি বিক্রির অছিলায় এলাকায় রেইকি করে নির্দিষ্ট দোকান চিহ্নিত করত। তারপর রাত হলেই তারা শুরু করে দিত অপরাধমূলক কার্যকলাপ।
জেলার পুলিশ সুপার আমনদ্বীপ জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হওয়া দুঃসাহসিক চুরির ঘটনার সঙ্গে এই গ্যাং-এর সদস্যরা যুক্ত বলেই মনে করা হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ, পূর্বস্থলীর কালেখাঁ তলা, মুর্শিদাবাদের ভরতপুর সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গ্যাংটি চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। অগ্রদ্বীপের সোনার দোকানের লোহার গ্রীল ও কলাপসিবল গেট ভেঙে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার সামগ্রী চুরি করে নিয়ে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। কাটোয়া থানার পুলিশ অগ্রদ্বীপের সোনার দোকানে চুরির ঘটনার তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে দ্রুত অভিযুক্তদের শনাক্ত করে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই শুক্রবার রাতে পুলিশ কাটোয়ার মিল পাড়ার একটি ভাড়া বাড়ি থেকে দুই মহিলা সহ মোট সাত জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে চুরি যাওয়া ৪৫০ গ্রাম সোনার গয়না, নগদ ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা, ১১ টি মোবাইল ফোন, ৫ টি দেশি পাইপগান, ৪০ রাউন্ড গুলি, বেশকিছু রূপোর গয়না এবং ৬ টি সাইকেল উদ্ধার হয়েছে। এছাড়াও শাবল, রড, করাত, হাতুরি, ছেনি প্রভৃতি চুরির সরঞ্জাম পুলিশ উদ্ধার করেছে। ধৃতদের হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে পুরো গ্যাংটিকে করতে প্রচেষ্টা চালানো হবে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।