কুমারগঞ্জ: বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ হাইস্কুল গণনাকেন্দ্রের পেছনে আত্রেয়ী নদীর ধারে মিলেছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনের ১৪-১৫টি ব্যালট পেপার। শুক্রবার সেখান থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে ধাদলপাড়ার পৃথক আরেকটি জায়গায় বস্তার ভেতর থেকে উদ্ধার হল আরও ৪২টি ব্যালট পেপার। এই নিয়ে গত দু’দিনে সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রায় ৫৬টি ব্যালট পেপার উদ্ধার হল বলে অভিযোগ বিজেপির। দুর্নীতি করে বিজেপিকে ভোটে হারানোর অভিযোগ তুলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি। এদিন খবর পেয়ে কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ কেন্দ্রীয় বাহিনীর সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে ব্যালট পেপারগুলি সিজ করে থানায় নিয়ে যায়।
এবিষয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, তৃণমূল গোটা রাজ্যজুড়ে লাগামহীন সন্ত্রাস, খুন, ভীতি প্রদর্শন ও ভোট চুরি করে বিজেপিকে অন্যায়ভাবে হারিয়েছে। এবারের নির্বাচন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দলবল একটা প্রহসনে পরিণত করেছে এদিনের ঘটনার পর তা আরও একবার প্রমাণিত হল। পাশাপাশি তিনি বলেন, এই ঘটনায় বিজেপি বৃহত্তর আন্দোলনের পাশাপাশি শীঘ্রই আদালতে মামলা দায়ের করতে চলেছে। অন্যদিকে, সিপিএম নেতা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘রাজ্যজুড়ে তৃণমূল সন্ত্রাস, হুমকি ও ভোট লুট করে যেভাবে ক্ষমতায় এসেছে এই ঘটনা তারই একটা উদাহরণ মাত্র। সারা রাজ্য জুড়ে তৃণমূল যা করেছে এখানেও একই ধরনের অপকর্ম হয়েছে।’
যদিও বিরোধীদের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। দলের কুমারগঞ্জ ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল বসাক বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে এত নিরাপত্তার মধ্যে ভোট গণনা করা হয়েছে। কোনওরকম ব্যালট পেপার বাইরে যাওয়ার কথা নয়। এক্ষেত্রে কিছু ঘটলে কেন্দ্রীয় বাহিনী দায়ী। এগুলো সবই বিজেপির ষড়যন্ত্র। বিজেপি যেভাবে রাজ্যজুড়ে পরিকল্পনা করে চলেছে তাতে পরপর দু’দিন নয় এরপর আরও কয়েকদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে তাঁরা ব্যালট পেপার উদ্ধার করে আনলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ বিজেপি রীতিমতো পরিকল্পনা করে রাজ্য সরকারকে অপদস্থ করতে এরকম কাজ করছে।’
বিডিও ছেওয়াং তামাং জানিয়েছেন, কিভাবে কোথা থেকে এই ব্যালট পেপার উদ্ধার হচ্ছে তা তদন্ত করে দেখতে হবে। এগুলি আসল ব্যালট পেপার না নকল, তাও তদন্ত সাপেক্ষ। জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণা জানান, কুমারগঞ্জে পাওয়া ব্যালট পেপারগুলি পুলিশ সিজ করেছে। সেগুলি বৈধ কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যালট পেপারগুলি কোথা থেকে এল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গতকালও আত্রেয়ী নদীর ধারে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ব্যালট পেপার উদ্ধার হয়। ১৪-১৫টি ব্যালট একসঙ্গে উদ্ধার হয়। নদীর ধারে ঝোপঝাড়ের মধ্যে পড়ে থাকা ব্যালটগুলিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিজেপি প্রার্থীর প্রতীকের উপর ভোট চিহ্নের ছাপ দেওয়া ছিল। একটি ব্যালটে সিপিএম এবং আরেকটি ব্যালটে তৃণমূল প্রার্থীর প্রতীকেও ছাপ দেওয়া ছিল বলে অভিযোগ। এই ব্যালট পেপারগুলি কুমারগঞ্জ ব্লকের বটুন গ্রাম পঞ্চায়েতের। ব্যালট উদ্ধারের ঘটনায় বিডিও অফিসে অভিযোগ দায়ের করে বিজেপি। অভিযোগ জানানো হয় থানাতেও। কিন্তু পুলিশ বিডিও অফিসে জমায়েত হওয়া বিজেপি কর্মীদের উপর লাঠি চালায় বলে জানা গিয়েছে। এতে জখম হন ৩ বিজেপি কর্মী। এরপর এদিন ফের ব্যালট পেপার উদ্ধার হল।