বালুরঘাট: ১৫ নয় ১৮ অগাস্ট স্বাধীন হয়েছিল দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সদর বালুরঘাট। প্রত্যেক বছর এই দিনটি সাড়ম্বরে উদযাপন করা হয়। অন্যান্যবারের মত বিজেপির তরফে বালুরঘাট হাইস্কুল মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে দিনটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করা হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বালুরঘাটের সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা। এদিন বিজেপির পাশাপাশি বালুরঘাটে একাধিক সংগঠনের তরফে দিনটি উদযাপন করা হয়। যদিও সরকারিভাবে দিনটি উদযাপন করা হয়নি বলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সরব হয়েছেন।
তিনি জানান, ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট দেশ স্বাধীন হলেও বালুরঘাট স্বাধীন হয় ১৮ অগাস্ট ১৯৪৭। ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত বালুরঘাট, মালদা ও রায়গঞ্জ সহ বিস্তীর্ণ এলাকা পূর্ব পাকিস্তান না ভারতে অন্তর্ভুক্ত হবে তা নিয়ে একটি ধোঁয়াশা ছিল। যদিও সেই সময় বালুরঘাটের স্বাধীনতা সংগ্রামী সহ কয়েক হাজার মানুষের আন্দোলনের ফলে বালুরঘাট সহ বিস্তীর্ণ এলাকা ১৮ অগাস্ট স্বাধীন হয় এবং সেদিনই বালুরঘাট ভারতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। তাই আজকের এই দিনটিতে তারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে দিনটিকে সম মর্যাদায় পালন করলেন।
কথিত আছে, স্যার সিরিল র্যাডক্লিফের ঘোষণা অনুসারে ১৯৪৭ সালে ১৪ অগাস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ অগাস্ট ভারত স্বাধীন হয়েছিল। ১৫ অগাস্ট যখন ভারতবাসী স্বাধীনতার আনন্দে মাতোয়ারা তখন আজানা আশঙ্কা নেমে এসেছিল বালুরঘাটবাসীদের মধ্যে। ১৪ অগাস্ট রাতে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী ও পাকিস্তানি নেতারা বালুরঘাট হাই স্কুলে হাজির হয়। আর ১৫ অগাস্ট মহকুমা শাসক বালুরঘাটে পাকিস্তানের পতাকা তোলেন। শহরের নাট্যমন্দির থেকে জেলা সদর আদালত পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে পাকিস্তানি পতাকায় সুসজ্জিত করা হয়েছিল। সেই সময় বালুরঘাটের সাধারণ মানুষ ও পাকিস্তানি ফৌজের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। বেশ কিছু জায়গায় সাধারণ যুবক ও স্বাধীনতা সংগ্রামীরা সশস্ত্রভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু তদানীন্তন বালুরঘাট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কুমুদরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের সাহসিকতায় পাকিস্তানি পতাকা হাই স্কুল চত্বরে তুলতে পারেননি। সেই সময় স্যার সিরিল র্যাডক্লিফ বালুরঘাট সহ রায়গঞ্জ ও অসমের বেশ কিছু এলাকাকে “নোশনাল এরিয়া” বলে ঘোষণা করেছিলেন। অবশেষে ১৭ অগাস্ট আধুনা, বাংলাদেশের ধামারহাট, পোরসা, পত্নীতলা, থানা বাদ দিয়ে বালুরঘাট সহ মোট পাঁচটি থানা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮ অগাস্ট সকালে বালুরঘাটে ভারতীয় জাওয়ানরা অবস্থান নেয়। পাশাপাশি পাকিস্তানি সেনাদের বালুরঘাট ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
অবশেষে ১৮ অগাস্ট প্রশাসনিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় বালুরঘাট স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীন বালুরঘাটে প্রথম সরোজরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় পতাকা তোলেন। এরপর ১৯ অগাস্ট বালুরঘাট হাই স্কুল ময়দানে স্বাধীনতার বিজয় উৎসব পালন করে বালুরঘাটবাসী। ১৮ অগাস্ট বালুরঘাট স্বাধীন হলেও সারা দেশের সঙ্গে ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় এই অঞ্চলে। প্রশাসনিক ভাবেও ১৮ অগাস্ট বালুরঘাটে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় না। এদিকে এই দিনটিতে প্রত্যেক বছর বালুরঘাট হাইস্কুল মাঠে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে বিজেপি।