বালুরঘাট: প্রথাগত ধান, গম বা পাট চাষের বাইরে গিয়ে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা মাল্টা চাষ করে কৃষিকাজে দিশা দেখাচ্ছে বালুরঘাটের এক কৃষক। তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রামের অন্য কৃষকরাও ধীরে ধীরে এই চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আয়ের পথ দেখছেন। বালুরঘাট ব্লকের জলঘর গ্রামের মিঠু বর্মন মাল্টা চাষ করে তাক লাগিয়েছেন সকলকে। পাইকারি বাজারে যা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা করে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছেন।
কম খরচে কমলা জাতীয় মাল্টা ফলের চাষ করে রীতিমতো সাড়া ফেলেছে মিঠু বর্মন। তার বাগানে গেলেই দেখা যায় সারি সারি গাছে ঝুলে রয়েছে মাল্টা। কোনও গাছে পাতা কম, ফল বেশি। আর এই ফলের ভারে নুইয়ে পড়েছে অনেক গাছ। ফলটি সবুজ হলেও ভীষণ রসালো ও মিষ্টি খেতে। এমনকি বাগানে ক্ষতিকারক রাসায়নিক কীটনাশক বা সার ব্যবহার না করে ভেষজ কীটনাশক তৈরি করে পোকামাকড় দমন করা হয়। এতে ভেজালেরও কোনও আশঙ্কা নেই।
এই ফল ব্রিটিশ আমল থেকেই পাহাড়ি এলাকায় জনমানসে খ্যাত। মূলত উত্তরাখণ্ডের বুকে চাষ হওয়া মাল্টার স্বাদ যেমন সুন্দর তেমনই এর পুষ্টির গুরুত্বও রয়েছে। তবে এখন দুই বাংলার পাহাড়ি এলাকাতেও এর চাষ বাড়ছে। কিন্তু সমতলে এই ফলের তেমন ফলন দেখা যায় না। তার মধ্যে প্রান্তিক দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জলঘর গ্রামে মাল্টা চাষ যেন অসাধ্য সাধন। এই মাল্টায় রয়েছে ভিটামিন সি, বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও পেকটিন। যা কোলন ক্যানসার রোধ করে। এছাড়াও মাল্টা ত্বক সজীব রাখে, মুক্তি দেয় বলিরেখা থেকে। মাল্টা যেকোনও সংক্রমণ প্রতিহত করতেও কার্যকরি। প্রদাহজনিত রোগ সারিয়ে তুলতে মাল্টার গুরুত্ব রয়েছে। ভরপুর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলের চাষ জেলাতে তেমনভাবে শুরু হয়নি বললেই চলে। গত বছর নিজের এক বিঘা জমিতে এই চাষ শুরু করেন তিনি। এক বছরের মধ্যেই প্রচুর ফল দিতে শুরু করেছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধান, পাট সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে আসছেন। কিন্তু এই সমস্ত চাষ করে তেমনভাবে লাভের মুখ বিগত কয়েক বছর ধরে না দেখার ফলে তিনি ঠিক করেন ভিন্ন ধরনের চাষ করার। এরপর তিনি সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে মাল্টা চাষ শুরু করেন। তিনি ঠিক করেন চিরাচরিত ধান কিংবা পাঠ চাষ বাদ দিয়ে মাল্টা চাষ করবেন। তাতেই মনোনিবেশ করেন তিনি। এক বছরের মধ্যেই মাল্টা গাছগুলো ব্যাপক ফল দিতে শুরু করেছে।
মাল্টা চাষি মিঠু বর্মন জানান, কমলালেবু ও মৌসম্বি ক্রস করে এই ফল উৎপন্ন করা হয়। খেতে পুরোপুরি মিষ্টি। চাষিদের স্বল্প পরিশ্রমের পাশাপাশি স্বল্প খরচে এই ফলের চাষ করা সম্ভব। চিরাচরিত চাষের বাইরে গিয়ে এই চাষ শুরু করেছিলাম। সেভাবে কোনও অভিজ্ঞতা না থাকার ফলে প্রথম অবস্থায় একটু সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু সেই সমস্যা ক্রমশ কাটিয়ে আগামী দিনে এই চাষ আরও বড় আকারে করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমাকে দেখে অনেকেই এখন এই চাষে আগ্রহী হচ্ছে।