মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, আলিপুরদুয়ার: বক্সা ব্যাঘ্র-প্রকল্প এলাকার দুটি গ্রাম থেকে পুনর্বাসন পাওয়া বাসিন্দাদের হাতে মুখ্যমন্ত্রী জমির পাট্টা তুলে দিয়ে নতুন গ্রামের নামকরণ করেছেন বনছায়া (Bano Chaya) বস্তি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গাঙ্গুটিয়া ও ভুটিয়া বস্তির দুটি গ্রামের ২০৩টি পরিবারকে নতুন করে বসবাসের জন্য কালচিনির (Kalchini) ভাটপাড়া চা বাগানের বিজয়পুর বস্তির কাছে একটি সরকারি জায়গায় জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে। সেখানে মূল সড়কের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ৭০ লক্ষ টাকায় ইতিমধ্যে জেলা পরিষদ থেকে একটি পিচ রাস্তা তৈরির কাজ চলছে।
আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) জেলা শাসক আর বিমলা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত নতুন ওই গ্রামকে ‘মডেল গ্রাম’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। গাঙ্গুটিয়া ও ভুটিয়া বস্তিতে মোট ২৪২টি পরিবার ছিল। এদের মধ্যে অধিকাংশই চাকরিজীবী। ওই গ্রাম দুটির মোট ২০৩টি পরিবার নিজেদের বসবাসের জন্য সরকারি জমির পাট্টার জন্য আবেদন জানান। আবেদনকারী সবাইকেই ইতিমধ্যে জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে। যেখানে গ্রাম দুটির বাসিন্দারা পাট্টা পেয়েছেন সেখানে কাছেই পাহাড়, জঙ্গল, নদীও রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ওই জায়গায় বাসিন্দারা চাইলে হোমস্টে তৈরি করেও পর্যটকদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। তাঁদের প্রয়োজনে স্কিল ডেভেলপমেন্টের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে প্রশাসন (Administration)। রাস্তা, স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আলো, পানীয় জল সব পরিষেবাই পাবেন বনছায়ার বাসিন্দারা। তিনি আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত বনছায়া বস্তির কাছেই প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকায় প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত একটি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলের পরিকাঠামো তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বনছায়া বস্তি ছাড়াও আশপাশের অন্তত তিনটি চা বাগান এলাকার পডুয়াদের সেখানে লেখাপড়ার অনেক সুবিধা হবে।
গাঙ্গুটিয়ার বাসিন্দা জীবনকুমার লামা বলেন, ‘এতদিন যেন আমরা জেলখানায় দিন কাটিয়েছি। নতুন জায়গায় ঘর করার জন্য টাকাও পেয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বসবাসের জন্য সরকারি জমির পাট্টা দিয়ে নতুন করে সুন্দর জীবনযাপনের পথ বাতলে দিলেন। মোট আট ডেসিমাল জমির পাট্টা পেয়েছি। এজন্য আজীবন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। গাঙ্গুটিয়া গ্রামে এতদিন বিশেষ করে বর্ষার কয়েক মাস গ্রাম থেকে শহরে যাতায়াত সহজ ছিল না। আমরা যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসবাস করতাম। প্রায়ই বুনো হাতির দল ফসল খেয়ে নিত। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা থেকে নিজেদের বা পরিবারের চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়াও কষ্টসাধ্য ছিল। এখন যেখানে পাট্টা পেয়েছি তার কাছেই রয়েছে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। গ্রামে যোগাযোগের জন্য পাকা রাস্তা, আলো, পানীয় জলের পরিকাঠামো তৈরি করছে প্রশাসন। কাছেই রয়েছে প্রাথমিক স্কুলও।’ বনছায়ায় পাট্টা পেয়েছেন পূর্ণমান রাইও। তিনি বলেন, ‘গাঙ্গুটিয়া নদীর ভাঙনে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেখানে পুনর্বাসনের জন্য সরকার জায়গা দিয়েছে। এতে অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্যে ও নির্বিঘ্নে বসবাস সম্ভব হবে।’