সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি: অপত্যস্নেহের জের। কুকুর ধরেও পুরকর্মীরা বিপাকে পড়লেন। মঙ্গলবার দুপুরে শিলিগুড়ির (Siliguri) ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ মিলনপল্লির চিলড্রেন্স পার্ক সংলগ্ন বাঘা যতীন সরণির ঘটনা। এলাকার ত্রাস হয়ে ওঠা এক কুকুরকে ধরে পুরকর্মীরা গাড়িতে পুরেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় এক মহিলা সেই গাড়ির খাঁচা খুলে দিতেই সেই কুকুরটি নিমেষে হাওয়া। পুরকর্মীরা খেপে গেলেও ওই মহিলা নির্বিকার, ‘ও পাগল না। ওকে আমি নিয়মিতভাবে খেতেও দিই।’ সব দেখে এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। ওই মহিলার কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। পুরনিগমের পরিবেশ বিভাগের মেয়র পারিষদ সিক্তা দে বসু রায় বললেন, ‘চিকিৎসার জন্য কুকুরকে খাঁচাবন্দি করতে গিয়ে পুরকর্মীরা আগেও বাধার মুখে পড়েছেন। কিন্তু এদিন যা হল তা মেনে নেওয়া যায় না। সবাই সহযোগিতা করলে তো আখেরে শহরটারই লাভ।’
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কুকুরটি সম্প্রতি পাঁচজনকে কামড়ায়। কেউ রাস্তায় বের হলেই সেটি মানুষের ওপর হামলা চালাচ্ছিল। কুকুরের ভয়ে অনেকে বাড়ি থেকে বের হওয়াই প্রায় বন্ধ করে দেন। বাসিন্দাদের কাছে খবর পেয়ে এদিন দুপুরে পুরকর্মীরা ওই এলাকায় যান। বিস্তর কসরত করে কুকুরটিকে বন্দি করা হয়। সেটিকে কুকুর ধরার বিশেষ খাঁচাওয়ালা গাড়িতে তোলা হয়। তারপর কী হয়েছে তা তো এই প্রতিবেদনের প্রথম অংশেই বলা হয়েছে। ওই মহিলা এদিন যে ঘটনা ঘটান তা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি।
মিলনপল্লির বাসিন্দা তাপস সরকার, অঙ্কিতা রায়দের কথায়, ‘আমরা দেখিয়ে দেওয়ার পর পুরকর্মীরা ওই কুকুরটিকে বন্দি করতে নামেন। তবে ওই কাজে এদিন তাঁদের অনেকটাই কসরত করতে হয়েছে। কুকুরটিকে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের কাছে শেলটার হোমে কয়েকদিন রেখে চিকিৎসা করার পর সেটিকে এলাকায় ফিরিয়ে আনা হবে বলে ঠিক হয়। কিন্তু ওই মহিলা যা করলেন তা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। কারও ওপর কারও অপত্যস্নেহ থাকতেই পারে। কিন্তু তার জেরে অন্যদের সমস্যা তৈরি করার বিষয়টি কোনওমতেই মেনে নেওয়া যায় না।’ কাউন্সিলার জয়ন্ত সাহা বললেন, ‘এক মহিলা গাড়ির দরজা খুলে দেওয়ায় কুকুরটি পালিয়ে যায় বলে শুনেছি। নতুন করে কেউ যাতে সমস্যায় না পড়েন সেটাই এখন প্রার্থনা করছি।’
রাতে শিলিগুড়িতে যাতায়াতের সময় পথকুকুরের (Street Dog) হামলার মুখে পড়েননি, এমন মানুষের সংখ্যা কম। তাঁরাও এই ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।
কুকুরদের ভালো রাখতে প্রিয়া রুদ্র শিলিগুড়িতে বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছেন। তিনিও এদিনের ঘটনার জেরে সরব হয়েছেন। প্রিয়া বলেন, ‘পুরকর্মীরা কোনও কারণ ছাড়াই যেখান সেখান থেকে কুকুর ধরছেন। এ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তবে এদিন যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটিকেও মানা যায় না।’