প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: মণিপুর ইস্যুতে যখন সংসদীয় পরিসরে কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপে ফেলতে একজোট বিরোধী ফ্রন্ট, ঠিক সেই মুহূর্তে রাজ্য পঞ্চায়েত ভোটে বেনজির সন্ত্রাসের প্রতিবাদে দিল্লিতে সংসদ ভবনে ধর্নায় বসলেন রাজ্যের বিজেপি সাংসদরা। বৃহস্পতিবার সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রথমদিনই গান্ধিমূর্তির পাদদেশে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভয়াবহ সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে তৃণমূল সরকারকে উৎখাতের ডাক দিলেন বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার, লকেট চট্টোপাধ্যায়, দিলীপ ঘোষ, দেবশ্রী চৌধুরী, খগেন মুর্মু, রাজু বিস্ট, এস এস আলুওয়ালিয়ারা।
প্রসঙ্গত, এবারের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে সীমাহীন সন্ত্রাস দেখেছে বাংলা। জেলায়-জেলায় ভোট হিংসার বলি হয়েছেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল থেকে শুরু করে বিরোধী বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস, আইএসএফ সহ অন্য দলের কর্মীরা। ভোটের নামে লুঠতরাজ চলেছে বহু বুথে। তৃণমূলের মদতেই বাংলার ভোটে লাগামছাড়া সন্ত্রাস হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। এর আগে গতকাল কলকাতায়ও পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার প্রতিবাদে মিছিল করেছে রাজ্য বিজেপি। এবার সেই প্রতিবাদের আঁচ উড়ে এল দিল্লির সংসদ ভবনে।
সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা এদিন গান্ধিমূর্তির পাদদেশে একত্রিত হয়ে বাংলার তৃণমূল সরকারকে উৎখাতের ডাক দিয়েছেন। তৃণমূলের মদতেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে সীমাহীন সন্ত্রাস চলেছে বলে দাবি করেছেন পদ্ম সাংসদরা। এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি ও বালুরঘাট সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে হিটলারের পুনর্বিভাব ঘটেছে। পঞ্চায়েত হিংসায় এখনও পর্যন্ত ৫৫ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। এই মৃত্যুর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়ী। তৃণমূল নেত্রীর অঙ্গুলিহেলনেই সমস্ত ঘটনা ঘটেছে। তাই আজ দিল্লিতে বিজেপির সংসাদরা তৃণমূল সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখিয়েছেন।’ শুধুমাত্র গান্ধি মূর্তির পাদদেশে ধর্না প্রদর্শন করেই ক্ষান্ত থাকেননি বঙ্গ বিজেপি সাংসদরা, পরবর্তীতে রাজ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাস ও হিংসার ঘটনার ইস্যুতে লোকসভায় জরুরি আলোচনার দাবি জানিয়ে অধ্যক্ষ ওম বিড়লার কাছে পত্রপ্রেরণ করেছেন সুকান্ত, দিলীপরা।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘মণিপুর ইস্যুতে সরব হয়েছে তৃণমূল। অথচ অতীতে রাজ্যের শাসকদলের নির্দেশেই ঘটেছে প্রায় একইরকম ঘটনা। সিস্টেমেটিক টেরর বলে সেইসব ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে লাগামছাড়া হিংসা ও মৃত্যুমিছিলে বেআব্রু হয়ে পড়েছে রাজ্য সরকার। তার বিচার কে করবে?’ শুক্রবার ২১ জুলাই, শাসকদলের ‘শহিদ দিবস’ পালন করা নিয়ে কটাক্ষ হেনে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘ওটা ডিম-ভাত উৎসব। এসব করে পঞ্চায়েত হিংসা থেকে গা বাঁচাতে চাইছে সরকার। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না।’
সংসদের বাদল অধিবেশনে মণিপুর প্রসঙ্গ নিয়ে কেন্দ্রের তুমুল বিরোধিতা করার পরিকল্পনা করেছে বিরোধী দলগুলি। তবে এই আক্রমণের পালটা স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেছে বিজেপিও। বিরোধী দলগুলির হাতে থাকা রাজ্য সরকার গুলিকেই নিশানা করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। বাংলার পঞ্চায়েত হিংসা থেকে শুরু করে দিল্লির বন্যা পরিস্থিতি- সমস্ত বিষয়েই আক্রমণ শানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রথমদিনেই রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভয়াবহ সন্ত্রাসের অভিযোগে বঙ্গ বিজেপির ধরনা, সেই পরিকল্পনাকেই চিহ্নিত করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ।