উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ পঞ্চায়েত ভোটে এত শান্তিপূর্ণ মনোনয়ন এর আগে দেখেনি পশ্চিমবাংলা। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে দু একটি জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তারজন্য দায়ী বিরোধীরাই। শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে নামখানার ইন্দিরা ময়দানে এমনই মন্তব্য করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধীতা করেন বিরোধীরা। বিরোধীদের বক্তব্য, মনোনয়ন পর্বে রাজ্যজুড়ে যে বোমাবাজি, গোলাগুলির ঘটনা ঘটল, সেগুলি কি সিনেমার শ্যুটিং ছিল?
আগামী ৮ জুলাই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবারই শেষদিন ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ। মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় হিংসার ঘটনা ঘটেছে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে। ভয়ঙ্কর হিংসার ঘটনা ঘটে ডোমকল, ভাঙড়, ক্যানিং, চোপড়া সহ বহু জায়গায়। সব হিংসাকেই ছাপিয়ে যায় ভাঙড়ের ঘটনা। অভিযোগ, মনোনয়ন পর্বের শেষ দুই দিনে ভাঙড়ে আইএসএফ কর্মীরা মনোনয়ন জমা দিতে এলে সংঘর্ষ বাধা দেয় তৃণমূল কর্মীরা। তৃণমূলের হয়ে পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন তৃণমূলের দুই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা আরাবুল হোসেন ও শওকত মোল্লা। গুলি, শয়ে শয়ে বোমাবাজ্ লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা, পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর, প্রচুর সংখ্যক গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে ভাঙড়ে। বিরোধীরা সোচ্চার হন এর প্রতিবাদে। কলকাতা হাইকোর্ট পরিস্থিতি বুঝে রাজ্যের প্রতিটি জেলাতে আধাসামরিক বাহিনী আনার নির্দেশ দেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। যদিও এই হিংসার ঘটনা ঘটলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করছেন শান্তিপূর্ণভাবেই পঞ্চায়েতের মনোনয়ন পর্ব মিটেছে, যা অতীতে কখনই ঘটেনি।
এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচির শেষ ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে। সেখানে নামখানার ইন্দিরা ময়দানে অভিষেকের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা সভার শুরুতেই জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নন, তৃণমূলের নেত্রী হিসাবে তিনি বক্তব্য রাখতে এসেছেন। বিরোধীদের নিশানা করে তিনি বলেন, “ভাঙড়ের ঘটনা কিছু গুন্ডা করেছে। তৃণমূল করেনি। আমাদের দু’জন কর্মী মারা গিয়েছে। সেখানকার একটি দল মানুষকে প্ররোচিত করেছে।”
পরিসংখ্যান তুলে ধরে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘এবার ২ লক্ষ ৩১ হাজার মনোনয়ন জমা পড়েছে। এত শান্তিপূর্ণ মনোনয়ন এর আগে কখনও হয়নি। বাম আমলে ২০০৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৭০ জন মারা গিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে মারা গিয়েছিলেন ৩৬ জন।’’
তৃণমূলের আমলে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের সঙ্গে সরকারের দ্বন্দ্ব সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মীরার মত মেনে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানো হয়েছিল সেই ভোটে। তাতেও লাভ হয়নি। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল বাংলায়।’’ কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রসঙ্গে মণিপুর হিংসার কথাও তোলেন তিনি। বলেন, ‘‘সেন্ট্রাল ফোর্স তো মণিপুরেও নিয়ে গেল। কী হল? সেন্ট্রাল মিনিস্টারের বাড়িই জ্বালিয়ে দিয়েছে। ১৫০ জন মারা গিয়েছে। কিছু করতে পারেনি।’’