নয়াদিল্লি: ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চন’- বিবিসি নির্মিত তথ্যচিত্রটি দেশে নিষিদ্ধ করা হয় আন্তঃমন্ত্রক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে। এই সুপারিশ কার্যকর করা হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি আইনের রুল ১৬ অনুযায়ী। এই প্রসঙ্গেই কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি; দেশের সার্বভৌমত্ব, অখন্ডতা এবং ঐক্য রক্ষার স্বার্থেই তথ্যচিত্রের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখলের প্রশ্নের জবাবে এই মর্মেই বিতর্কিত নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বয়ান জারি করল কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রক। সরকারের এহেন জবাবে ক্ষুব্ধ সাকেত গোখলের পালটা যুক্তি, অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব প্রযোজ্য দেশের ক্ষেত্রে, কোনও ব্যক্তি বিশেষের উপরে প্রযোজ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কোনও রাষ্ট্র নয়, তিনি দেশও নন। তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সাকেতের দাবি, এই রুলের আওতায় শুধুমাত্র জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া অন্য কোনও অবস্থায় তথ্যচিত্রের প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা যায় না। মাস ছয়েক আগে ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চন’ তথ্যচিত্র নিয়ে এদিন এই মর্মে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র।
চলতি বছরের প্রথমে মুক্তি পেয়েছিল ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) নির্মিত তথ্যচিত্র ‘দ্য মোদি কোয়েশ্চন’৷ ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গা এবং পরবর্তীকালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থায় উগ্র হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসণের বেনজির প্রদর্শনকে সেলুলয়েডের পর্দায় তুলে ধরা এই তথ্যচিত্র গোটা দেশে রাজনৈতিক বিতর্কের ঝড় তোলে। বিবিসির এই তথ্যচিত্র ঘুম কেড়ে নিয়েছিল বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের। রাতারাতি কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে বিশেষ নির্দেশিকা জারি করে গোটা দেশে এই বিতর্কিত তথ্যচিত্রের প্রদর্শনের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞার পিছনে প্রকৃত কারণ কী, তা কখনই প্রকাশ্যে আনেনি কেন্দ্রীয় সরকার। এবার সেই কারণ জানার তাগিদে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখলে। তথ্যের অধিকার আইন প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছে সাকেতের প্রশ্ন ছিল, কোন যুক্তিতে বিবিসির তথ্যচিত্র এদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে? এই মর্মে কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় নথি প্রকাশের দাবিও জানান তিনি।
তাত্পর্যপূর্ণভাবে সাকেত গোখলের দাবি, তাঁর আরটিআই-র জবাবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যে জবাব দেওয়া হয়েছে তা নিতান্তই ‘উদ্ভট’ ও ‘বিভ্রান্তিকর’। সাকেতের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী অনুরাগ সিং ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রক জানিয়েছে, বিবিসির তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে আন্তঃমন্ত্রক কমিটির সুপারিশে। এই প্রসঙ্গেই কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, দেশের সার্বভৌমত্ব এবং সম্প্রীতি রক্ষার খাতিরে তথ্যচিত্রের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়৷ প্রত্যাশিতভাবেই, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের এই যুক্তি গ্রহণ করেননি সাকেত গোখলে। তাঁর দাবি, অখন্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব প্রযোজ্য দেশের ক্ষেত্রে, কোনও ব্যক্তি বিশেষের উপরে তা প্রযোজ্য নয়, তাই এই নিষেধাজ্ঞা আদৌ সংবিধান স্বীকৃত নয়। সংশ্লিষ্ট আন্তঃমন্ত্রক কমিটির এক্তিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সাকেত। তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় পেশ করা সাকেতের আবেদনপত্র গ্রহণ করা হলেও তাকে কোনও সরকারি নথি প্রদান করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন সাকেত গোখলে।