রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (GTA) এবং পঞ্চায়েত দখলে থাকলেও পাহাড়ে দু’বছর ধরে বকেয়া পুরসভার ভোট (Municipal Election) চাইছে না শাসকপক্ষ। বরং প্রশাসক বোর্ডর মাধ্যমেই যতদিন সম্ভব কাজ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী তারা। ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার (BGPM) বক্তব্য, প্রশাসক বোর্ডই ভালো কাজ করছে। সময় বুঝে নির্বাচন হবে বলে দলের মুখপাত্র এসপি শর্মা জানালেন। তবে দলের অন্দরের খবর, পাহাড়ের শহরাঞ্চলে বিজিপিএমের সংগঠন এখনও দুর্বল। লোকসভা ভোটেও গ্রামের দিকেই বেশি ভরসা করছে দল। তাই এখনই নির্বাচন নয়। অনীত থাপা (Anit Thapa) অবশ্য বল ঠেলেছেন রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের (Election Commission of India) কোর্টে।
বিজেপির পার্বত্য শাখার সভাপতি কল্যাণ দেওয়ান এ নিয়ে তৃণমূল এবং বিজিপিএমকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তাঁর মন্তব্য, ‘তৃণমূল-বিজিপিএম জোট পাহাড়ে পুরসভার ভোট করাতে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসক বোর্ডই বা কতদিন চলতে পারে?’
কিন্তু কেন এই অনীহা? বিজিপিএমের একাংশের বক্তব্য, এখনই পুরসভার নির্বাচন হলে জয়ের কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারণ ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট থেকে পরবর্তীতে জিটিএ ভোটে শহরাঞ্চলে দল ভালো ফল করেনি। লোকসভা ভোটেও শহরাঞ্চলে বিজেপি বেশি ভোট পাবে এমনটাই মনে করা হচ্ছে। ফলে এখন পুরসভার নির্বাচন হলে ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
২০১৭ সালের মে মাসে কালিম্পং, কার্সিয়াং এবং মিরিক পুরসভার ভোট হয়েছিল। মিরিক তৃণমূল কংগ্রেস এবং বাকি দুটি পুরসভা দখল করে বিজিপিএম। পুরসভায় বোর্ড গঠনের এক সপ্তাহের মধ্যে পাহাড়ে নতুন করে গণ্ডগোল শুরু হয়। গোর্খাল্যান্ডপন্থীদের আন্দোলন হিংসাত্মক আকার নেয়। গ্রেপ্তারির ভয়ে পাহাড় ছেড়ে আত্মগোপন করেন মোর্চা প্রধান বিমল গুরুং। তিন মাসের মাথায় অনীত থাপা এবং বিনয় তামাং রাজ্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাহাড়ের দায়িত্ব নেন। মিরিক পুরসভায় হাত না দিলেও কয়েক মাসের মধ্যে অন্য দুটি পুরসভায় বিমলের আমলে মনোনীত চেয়ারম্যানকে সরিয়ে নিজেদের পছন্দের কাউন্সিলারকে চেয়ারম্যান করেন অনীতরা।
গত কয়েক বছরে কালিম্পং এবং কার্সিয়াংয়ে প্রচুর কাজ হয়েছে, বলছেন বাসিন্দারাই। কালিম্পংয়ের ২৩টি ওয়ার্ডে নতুনভাবে রাস্তা তৈরি হয়েছে। ফুটপাথকে পেভার্স ব্লকে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পথবাতির ব্যবস্থাও করেছে পুরসভা।
২০২২ সালে তিন পুরসভার নির্বাচিত বোর্ডের মেয়াদ ফুরিয়েছে। অনীতদের পছন্দের প্রশাসক বসিয়ে কাজ চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। প্রায় দু’বছর ধরে এভাবেই কাজ চলছে। কিন্তু প্রশাসক বোর্ডের হাতে সেভাবে ক্ষমতা থাকে না। এমনকি নির্বাচিত বোর্ড ছাড়া কেন্দ্র এবং রাজ্যের তরফে আর্থিক বরাদ্দও সেভাবে দেওয়া সম্ভব নয়। সেই জন্য দ্রুত নির্বাচন হওয়া উচিত।