সৌরভ দেব, জলপাইগুড়ি: সামুদ্রিক মাছের কাঁটা ও একধরনের ফল একসঙ্গে ধারণ করলে নাকি শরীরের সব ব্যথা-যন্ত্রণা দূর হয়ে যাবে। একুশ শতকে বসবাস করেও তাবিজ-কবচ কিংবা জড়িবুটির মতো অবৈজ্ঞানিক ভাঁওতায় হামেশাই পা দিতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকে। এমনই এক ছবি ধরা পড়ল খোদ জলপাইগুড়ি(Jalpaiguri) মেডিকেল কলেজের সুপারস্পেশালিটি বিভাগের গেটের সামনে। এখানে খুল্লম খুল্লা বিক্রি হচ্ছে ব্যথা-যন্ত্রণা কমানোর জড়িবুটি। হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসে বহু রোগী দাঁড়িয়ে জড়িবুটি বিক্রেতার কথা শুনছেন। কেউ আবার কিনেও নিচ্ছেন। বিক্রেতার দাবি, তাঁর ওই তাবিজে কাজ হয়। কিন্তু হাসপাতালের(Hospital) চিকিৎসরা বলছেন, এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কাজ হওয়া তো দূরের কথা, জড়িবুটি কিংবা তাবিজ-কবচ উলটে বিপদ বাড়তে পারে।
মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক বহির্বিভাগের বাইরে প্রায় ৩০০ রোগীর লম্বা লাইন। ভেতরে রোগী দেখে চলেছেন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে, এই বিভাগের পাশে ফিজিওথেরাপি বিভাগে চলছে চিকিৎসা। কিন্তু উলটো চিত্র মেডিকেল কলেজের গেটের সামনে। সাদা রঙের গোলাকৃতির কিছু জিনিস এবং একটি ফলের বীজ কালো সুতোয় বেঁধে বাঁশের গায়ে টাঙিয়ে রেখেছেন এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে ছোট ছোট শিশিতে রয়েছে কিছু তেল জাতীয় জিনিস। তিনি চিৎকার করে বলে চলেছেন তাঁর ওই তাবিজে ১০ দিনে কমবে যে কোনও ধরনের ব্যথা-যন্ত্রণা।
ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁর নাম সফুর শেখ। বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলায়। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিনি এইধরনের জিনিস বিক্রি করে আসছেন। সফুরের দাবি, ‘এক ধরনের সামুদ্রিক মাছের কাঁটা এবং বাগমুখি ফল একসঙ্গে সুতো দিয়ে শরীরে বেঁধে রাখলে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ব্যথা-যন্ত্রণা কমে যাবে।’ এই জিনিসের বিনিময়ে তিনি ক্রেতাদের থেকে ১০০ টাকা করে নিচ্ছেন।
সফুরের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক ব্যক্তি অরুণ রায়। তিনি বলছেন, ‘আমি দু’দিন আগে অন্য একজনের থেকে এই একই জিনিস নিয়েছি। কিন্তু কোনও উপকার হচ্ছে বলে মনে হয় না। যে কারণে আজ হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছি।’
এ ব্যাপারে জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান আনন্দকিশোর পাল বলেন, ‘এগুলোর কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। এগুলোতে কোনও কাজ হয় না। উলটে এসবে বিপদ আরও বাড়তে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে কোনও শারীরিক সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’ সাধারণ মানুষকে এব্যাপারে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।